নির্বাচন চাইলে আগে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে: জামায়াত আমীর
- ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:২২
২০২৬ সালের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত রাজধানীর পল্টন মোড়ে আয়োজিত ৮ দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াতের আমির। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ২টায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে এ সমাবেশের আয়োজন করে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক আট রাজনৈতিক দল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি কম এবং খুবই সুস্পষ্ট। প্রথমত দাবি হচ্ছে জুলাই সনদকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোনো নির্বাচন নাই। গণভোটের ব্যাপারে সব দল একমত, তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন? একমত হয়ে যখন স্বাক্ষর করেছি সবাই, তখন গণভোট আগে হওয়াই হচ্ছে যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়ে আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে তখন আর কোনো সংশয় সন্দেহ থাকবে না।
আরও পড়ুন: চবিতে পোষ্য কোটা বাতিল, ন্যূনতম জিপিএর পাশাপাশি কমল আসন সংখ্যাও
তিনি বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এটা নিয়ে কেউ ধুম্রজাল সৃষ্টি করার চালাবেন না। ‘উদর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ ফেলবেন না।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে সব দল আমাদের মতামত দিয়েছি। এই আট দলের পক্ষ থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আমরা দেই নাই। আমরা প্রস্তাবনা যৌক্তিক মনে করে সেখানে আলাপ-আলোচনায় ইতিবাচক মত দিয়েছি। এরপর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে একটা চার্টার তৈরি হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা যে, সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা বলবে বাকিরা তাই মেনে নেবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, কেউ কেউ তা মেনে নিতে রাজি নন।
বিএনপির উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই সনদে যদি আপনি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখান, জাতীয় নির্বাচনে আপনি শ্রদ্ধা দেখাবেন কীভাবে? এই জায়গায় আসতে হবে। সব বায়না ভুলে যান। জুলাই শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখান। জুলাইয়ে যারা লড়াই করেছে, পঙ্গু আহত হয়েছে, এখনো ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট করছেন, মেহেরবানি করে তাদের মুখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। আমার ভাই আল্লামা মামুনুল হক সাহেব বলেছেন, লড়াই করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি, লড়াই করে জনগণের দাবি আদায় করব। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো দলের নয়, জনতার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: শর্ত পূরণ করা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার তালিকা চাইল মন্ত্রণালয়
তিনি বলেন, জনতা কি চায় তা কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন, যদি এই ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে নিজের পরিণতির জন্য যে বুঝতে ব্যর্থ হবেন তাকে তৈরি থাকতে হবে।
জনগণকে কথা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা জনগণের মুক্তি আদায় করেই ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ। আমরা ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, ভদ্র ভাষায় কথা বলব। কিন্তু আমাদের দাবির ব্যাপারে আমরা হিমালয়ের মতো অটুট থাকব। কারণ এই দাবি জনগণের দাবি, কোনো দলের দাবি নয়। এই দাবি বিপ্লবের দাবি। এই দাবি ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। অতএব ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে বাংলাদেশের জনগণ মাথানত করবে না।
পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাংবিধানিক আদেশ জারি ও গণভোট আয়োজন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালু, সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত, ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন-দুর্নীতির বিচার এবং স্বৈরাচারের দোসর দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
মহাসমাবেশে অংশ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আন্দোলনরত দলগুলোর পক্ষে বক্তব্য দেন আট দলের শীর্ষ নেতারা।