সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ফিলিপাইনে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাজেয়াপ্ত

সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলন © সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া ৮১ মিলিয়ন (৮ কোটি ১০ লাখ) ডলার বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) অ্যাকাউন্টে রয়েছে এই ডলার। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান ছিবগাত উল্লাহ এ মন্তব্য করেন।

সিআইডি প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশি-বিদেশি যে চক্রই থাকুক কেউ রেহাই পাবে না।  আদালতের মাধ্যমে সিআইডি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত করেছে। 

মো. ছিবগাত উল্ল্যাহ বলেন, সিআইডি ও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের আশা ফিলিপাইন এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা ফিরিয়ে দিবে। এর আগে রিজার্ভ চুরির ৬৮ হাজার ডলার বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল ফিলিপাইন।

মো. ছিবগাত উল্ল্যাহ বলেন, সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫), ধারা ১৭(২)(৭) এর আওতায় আরসিবিসি থেকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্যসহ ৩ দেশ

সিআইডি জানায়, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে আরসিবিসির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এবং সিইও লরেঞ্জো ট্যানের যোগসাজশে জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস ডিগুইতো এবং ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও জুপিটার ব্রাঞ্চের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ৫টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থপাচারে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ফিলিপাইনের আদালত ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে।

মো. ছিবগাত উল্ল্যাহ আরো বলেন, প্রায় নয় বছর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচারে জড়িত ছিল। সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত, ফিলিপাইন সরকারের সরবরাহ করা পারস্পরিক আইনি সহায়তা অনুরোধের মাধ্যমে সংগৃহীত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিশেষ আদালত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় আরসিবিসি থেকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ৩৫টি ভুয়া বার্তার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা চালায় অপরাধীরা। এর মধ্যে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট করতে সক্ষম হন তারা। এই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যায় ২ কোটি ডলার, যে অর্থ অবশ্য উদ্ধার করা হয়েছে, তবে বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ক্যাসিনোয় ঢুকে যায়।

আরও পড়ুন: পোষ্য কোটার ধাক্কা, গুচ্ছে ৩২৭৪৩ মেধাক্রম নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ভিসি-কন্যা

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আরসিবিসি মাত্র ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দিয়েছিল, যা তাদের পক্ষ থেকে অর্থ ফেরতের প্রথম পদক্ষেপ ছিল। তদন্তে আরও প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ঘটনাটি কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারা ২৭ অনুযায়ী আরসিবিসি কর্পোরেট সত্তা হিসেবে সম্পূর্ণভাবে মানিলন্ডারিং অপরাধে জড়িত ছিল। পাঁচজনের নামে যেই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ছিল তার মাধ্যমে করেছে এটা প্রমাণিত হয়। ফিলিপাইন সেটা বুঝতে পেরেই ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার ফেরত দেয়। এতে প্রমাণিত হয়, সেখানে টাকা পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এতে এটাও প্রমাণিত।

‎সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বলেন, সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশেষ আদালত ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকে পাচার করা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের জন্য একটি আদেশ দিয়েছে। এ আদেশের অনুলিপি ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে এই কারণে পাঠানো হয়েছে যাতে আদেশটাকে কার্যকর করার জন্য প্রশাসনিকভাবে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়। এটি পুরোপুরি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে এই টাকা দেশে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় গত ১২ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির প্রধান আসিফ নজরুল বলেছিলেন, হ্যাকারদের মূল পরিকল্পনা ছিল ২ বিলিয়ন ডলার চুরি করা। সেটা হলে দেশ আজ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়তো। এই চুরির সঙ্গে দেশের ভেতরের চক্র জড়িত ছিল। সে সময় আসিফ নজরুল জানান, সিআইডির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরসহ ১৩ জন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।