বেরোবি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভুলে বিপাকে ২০৫ গবেষক
- আনোয়ার হোসেন, বেরোবি
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:০৫
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) এমফিল, পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরাল প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া ২০৫ জন গবেষক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ‘ভূতাপেক্ষ অনুমোদন’ দেওয়ার আবেদন দুইবার প্রত্যাখ্যান করায়, এসব গবেষকের ডিগ্রি এখন কার্যত ঝুলে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এক্সিলেন্স) অধীনে ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হন। কিন্তু তখন ইনস্টিটিউটের অনুমোদন ছিল না। এ সংক্রান্ত অনুমোদন আসে ২০২৪ সালের ১৬ মে মাসে। অথচ এর আগেই অনেকে গবেষণা শেষ করেছেন, কেউবা থিসিসও জমা দিয়েছেন। ফলে এখন তারা বড় ধরনের একাডেমিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছেন। ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল ও ৪ সেপ্টেম্বর দুটি পৃথক চিঠিতে ইউজিসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের সুযোগ নেই। ফলে ২০১২-২০২২ সালের মধ্যে যারা এই ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন, তাদের ডিগ্রি এখন আইনি বৈধতার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাকসু নির্বাচনে লড়বেন রেকর্ড ৩৪ নারী প্রার্থী
গবেষকদের আশঙ্কা, এত বছর সময়, শ্রম ও টাকা খরচ করে গবেষণা করেও হয়তো তারা ডিগ্রি পাবেন না। তারা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই অনুমোদন ছাড়াই ভর্তি কার্যক্রম চালিয়েছে। তারা নিয়ম মেনে ভর্তি হয়েছিলেন, বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করেছিলেন। অথচ এখন সেই প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায়ভার তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএইচডিতে একজন বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি দেখে ভর্তি হয়েছি। অনুমোদনের বিষয়টি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে কেন পড়বে?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের চিঠি পাঠানোই প্রকৃতপক্ষে আইনী অজ্ঞতা। ইউজিসির চিঠিই এর প্রমাণ। কোনো প্রতিষ্ঠান কখনো ভূতাপেক্ষ অনুমোদন পায় না; ভূতাপেক্ষভাবে কেবল শিক্ষার্থী বা ফেলোদের গবেষণাকর্ম গ্রহণ করা যায়, প্রতিষ্ঠানকে নয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছে, বেতন দিচ্ছে, বিজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তি করেছে, এমনকি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের ফেলোদের ইউজিসি ফেলোশিপও দিয়েছে।
-সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের চিঠি পাঠানোই প্রকৃতপক্ষে আইনী অজ্ঞতা। ইউজিসির চিঠিই এর প্রমাণ। কোনো প্রতিষ্ঠান কখনো ভূতাপেক্ষ অনুমোদন পায় না; ভূতাপেক্ষভাবে কেবল শিক্ষার্থী বা ফেলোদের গবেষণাকর্ম গ্রহণ করা যায়, প্রতিষ্ঠানকে নয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছে, বেতন দিচ্ছে, বিজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তি করেছে, এমনকি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের ফেলোদের ইউজিসি ফেলোশিপও দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসবের দায় কোনোভাবেই গবেষকদের নয়। ফেলোদের সঙ্গে এসব নিছক প্রতারণা, ফৌজদারী অপরাধ। যেকোনো গবেষক বা ফেলো চাইলে আদালতে প্রতারণা ও ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন। ভর্তির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করাও চরম অপরাধ। বাস্তবতা হলো, সকল ভিসিরা এ প্রতিষ্ঠানের কেবল নাম পরিবর্তন ও আইন-বিধি নিয়ে রাজনীতি করেছেন, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলেই আজকের এই পরিণতি, এবং এরজন্য সকলকে এর দায়ভার নিতে হবে।’
আরও পড়ুন: জাকসুর ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক ড. মো ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘যেহেতু ভর্তির বিষয়ে আগে কোন অনুমোদন ছিল না , উপাচার্য স্যার অনুমোদন নিয়ে আসছেন। তাই এখন নতুন করে ভর্তি হতে হচ্ছে।’
দীর্ঘ ছয় থেকে আট বছর যারা গবেষণা করেছেন তাদের নতুন করে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে যেন ডিগ্রি কমপ্লিট করা যায় এ বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘অনেক গবেষকেরই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ফলে নতুন ভর্তি করলেও তারা কম সময়েই ডিগ্রি শেষ করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী জানান, ‘আমি ইউজিসিতে দুইবার আবেদন করেছিলাম ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের জন্য, কিন্তু তারা অনুমোদন দেয়নি। এখন নতুন করে সার্কুলার দেওয়া হবে। যারা ইচ্ছুক, তারা আবার রি-অ্যাডমিশন নিতে পারবেন।’