একাদশে ভর্তি: রাজধানীর সেরা কলেজ কোনগুলো?

প্রতীকী
প্রতীকী © সংগৃহীত

২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ১০ জুলাই। এর পরপরই শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া। যদিও অনলাইনে আবেদনের নির্দিষ্ট সময়সূচি এখনো ঘোষণা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই তা শুরু হবে। এ সময়টায় এসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় দ্বিধা হয় পছন্দের কলেজ বাছাই নিয়ে। কোথায় আবেদন করলে ভর্তির সুযোগ বেশি থাকবে? আবার কোন কলেজগুলো শিক্ষার মান, ফলাফল এবং পরিবেশের দিক থেকে এগিয়ে?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মাধ্যমিকের এই দুই বছর শুধু একাডেমিক ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ার সময় নয়, বরং এটি একজন শিক্ষার্থীর চিন্তা, স্বপ্ন এবং ক্যারিয়ার গঠনের পথরেখা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সিদ্ধান্তকে সহজ করতে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস তুলে ধরছে রাজধানী ঢাকার ‘সেরা ও খ্যাতিমান’ ২২টি কলেজের নাম; সাম্প্রতিক বছরগুলোর একাডেমিক ফল, শিক্ষার মান, সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং র্যাংকিংয়ের বিচারে যেগুলোকে এগিয়ে রেখেছে সংশ্লিষ্টরা।

নটর ডেম কলেজ
দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম নটর ডেম কলেজ; যা এনডিসি নামেও পরিচিত। এটি ক্যাথলিক উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; যা রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। কলেজটি হলি ক্রস মণ্ডলীর পুরোহিতদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়। এ প্রতিষ্ঠান থেকে গতবার অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৩ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩ হাজার ২৬৩ জন পাস করেছেন। পাশের হার ৯৯.৯৪ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৬১৮ জন। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৪০, ব্যবসা শিক্ষায় ৩৭৬ এবং মানবিক বিভাগে ২০২ জন। 

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ
দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। দেশ সেরা কয়েকটি কলেজের একটি। এটি রাজধানী ঢাকা শহরের ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত একটি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা পরিচালনায় কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত। সর্বশেষ ২০২৪ সালেল এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থী। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৯২ শতাংশ। অংশ নেওয়া ২ হাজার ৪১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাস।

মাইলস্টোন কলেজ
মাইলস্টোন কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের উত্তরায় অবস্থিত একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি কলেজিয়েট স্কুল। এতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে। একাদশ শ্রেনির ভর্তি প্রক্রিয়া এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। মাইলস্টোন কলেজ জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীনে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই শিক্ষাদান করে থাকে। গতবার অর্থাৎ সর্বশেষ ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অসাধারণ সাফল্য পায় কলেজটির ছাত্রছাত্রীরা। কলেজটি থেকে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে ৩ হাজার ১০৭ জন ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। পাসের হার শতভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ৬৪.৩৭ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ ১ হাজার ৯৫২, ব্যবসা শিক্ষায় ৩২ এবং মানবিক বিভাগে ১৬ জন। 

ঢাকা কলেজ
ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত। উপমহাদেশের শিক্ষা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই কলেজটি দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষার এক উজ্জ্বল বাতিঘর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ঢাকা কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নানা বিষয়ে পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এখানে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পর্যায়েরও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গতবার অর্থাৎ ২০২৪ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৪৮ জন পাস করেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৬৬ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৭৯১ জন, মানবিকে ৭৫ ও ব্যবসা শিক্ষায় ১০০ জন।

ঢাকা সিটি কলেজ
ঢাকা সিটি কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার কুদরত-ই-খুদা সড়কে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) থেকে শুরু করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। কলেজটি থেকে গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এইচএসসি পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পরীক্ষার্থী ছিল ৩৪৬০ জন, এর মধ্যে পাস করেন ৩৪৪৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭৯৭ জন শিক্ষার্থী। অকৃতকার্য হন ১৫ জন।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ঢাকার যাত্রাবাড়িতে অবস্থিত একটি বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলেজটি ইংরেজি এবং বাংলা মাধ্যমে পাঠদান করে এবং সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে। এটি শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক শ্রেণী বিভাজন, বিশেষ ক্লাস, এবং শিক্ষার উন্নয়নে একাডেমিক কাউন্সেলিং পরিচালনা করে। দেশ সেরা অন্যতম এ কলেজটি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ২ হাজার ৭৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৭৬৫ জন। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৬৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ হাজার ৫৭২ জন, ব্যবসা শিক্ষায় ১৬৫ ও মানবিক বিভাগে ২৮ জন।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজ ঢাকার বেইলি রোডে অবস্থিত বাংলাদেশে মেয়েদের একটি স্বনামধন্য উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এটি এখন বাংলাদেশের নামকরা স্কুল ও কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম মূলত এর প্রধান শাখা বেইলি রোডকে কেন্দ্র করে ঘটে থাকে। তবে একই প্রশাসনের অধীনে স্বতন্ত্র আরও তিনটি শাখা গড়ে তোলা হয়েছে যেগুলো রাজধানীর ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। গতবার কলেজটির এইচএসসির পাশের হার ছিল ৯৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭৩৭ জন। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ হাজার ৪৬৩ জন, মানবিকে ১৫১ ও ব্যবসায় শিক্ষায় ১২৩ জন।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ বাংলাদেশের ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত একটি আধুনিক ও সহ-শিক্ষামূলক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, যেখানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। এটি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করে থাকে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ৬৭৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৭৩ জন সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। এতে পাসের হার দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এছাড়া ১ হাজার ৪৯৭ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করেছিল।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ (বিএনএমপিসি), যা পূর্বে রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত ছিল। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পিলখানার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সদর দপ্তরে অবস্থিত একটি খ্যাতনামা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। মূলত বিজিবির সদস্যদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও, এখানে দেশের সকল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। এটি দেশের অন্যতম স্বনামধন্য ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাপক সম্মান অর্জন করেছে। ২০২৪ সাল অর্থাৎ গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ২ হাজার ৮২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ২ হাজার ৭৬ জন সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়। এতে পাসের হার দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এছাড়া ১ হাজার ৪৩৭ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করে।

বিএএফ শাহীন কলেজ
বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকা (বিএএফএসডি), যা সাধারণভাবে ‘ঢাকা শাহীন কলেজ’ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জাহাঙ্গীর গেট, ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত একটি অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত। এটি মূলত বিমান বাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এখানে সমানভাবে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। প্রতিষ্ঠানটিতে শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। ২০২৪ সাল অর্থাৎ গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ২ হাজার ২৫৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ২ হাজার ২৩৩ জন সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়। এতে পাসের হার দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া ১ হাজার ১২৬ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করে।

সরকারি বিজ্ঞান কলেজ
সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা দেশের অন্যতম পরিচিত ও মর্যাদাসম্পন্ন কলেজ হিসেবে বিবেচিত। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘ইন্টারমেডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজ’ নামে। বর্তমানে এই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পর্যায়েও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ বাংলাদেশের পিলখানার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদর দপ্তরে অবস্থিত একটি খ্যাতনামা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। পূর্বে এটি বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত ছিল। মূলত বিজিবি সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও, এখানে সকল শিক্ষার্থী শিক্ষালাভ করতে পারেন। এই কলেজটি দেশের অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হিসেবে স্বীকৃত। ২০২৪ সাল অর্থাৎ গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ৯৫৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৯৪২ জন সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়। এতে পাসের হার দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়া ১ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করে।

হলি ক্রস কলেজ
হলি ক্রস কলেজ একটি খ্যাতনামা ক্যাথলিক উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান, যা পবিত্র ক্রুশ সংঘের সন্ন্যাসিনীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত এই কলেজে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য, এই তিনটি বিভাগে সমন্বিত ও মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪ সাল অর্থাৎ গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ৩১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৩০৭ জন সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। এতে পাসের হার দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া ১ হাজার ১৯ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করে।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত একটি খ্যাতনামা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ও শৃঙ্খলার ধারায় একটি আদর্শ মডেল হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠানটিতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে দুইটি শিফটে, সকাল ও দিবা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ৯৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৬৮ জন এ-প্লাস পেয়েছেন। অর্থাৎ এ-প্লাস পাওয়ার হার ৯০ দশমিক ৩২ শতাংশ। সব পরীক্ষার্থী পাস করেন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
দেশ সেরা অন্যতম কলেজগুলো একটি হলো আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এটি ঢাকা শহরের কেন্দ্রীয় ব্যবসা ও বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলেই অবস্থিত। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল নামেও পরিচিত। স্বনামধন্য এ কলেজ থেকে  গত বছর ১ হাজার ৬০৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছেন ১ হাজার ৫৭৪ জন। পাশের হার ৯৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৭৮০ জন, যা মোট পাশের ৪৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিভাগভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগে ৯৫৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ৯৩৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৫৯ জন, যা বিজ্ঞান বিভাগের মোট শিক্ষার্থীর ৭০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ২৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ২৬৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৪ ও ব্যবসা শিক্ষায় বিভাগে ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৮৭ জন।

সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ
সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত একটি স্বনামধন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ‘সামসুল হক খান কলেজ’ নামেও পরিচিত। শিক্ষার পরিধি আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে এখানে ইংরেজি মাধ্যম শাখা চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ইতিমধ্যে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য শিক্ষাঙ্গন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে অর্থাৎ গত বছর এইচএসসিতে অংশ নেওয়া ১ হাজার ১২৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাস করে। এর মধ্যে ৮১২ জন এ প্লাস পেয়েছিলেন। বিভাগভিত্তিক হিসেবে বিজ্ঞানে এ-প্লাস পেয়েছে ৬৮৮, ব্যবসা শিক্ষা ৬৭ এবং মানবিক বিভাগে ৫৭ জন।

শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ
শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজ একটি অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এই কলেজটি সৈনিক ক্লাব থেকে কচুক্ষেত সড়কে অবস্থিত হওয়ায় এটি একটি নিরাপদ, নিরিবিলি ও অনুকূল পরিবেশে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদান নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানটি তার একাডেমিক উৎকর্ষের জন্য সুপরিচিত। পাঠ্যক্রমিক শিক্ষার পাশাপাশি এখানে শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও নেতৃত্বগুণের উন্নয়নেও সমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়। কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এবং শিক্ষকগণ তাদের মেধা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলেন। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ অসাধারণ ফলাফল অর্জন করে। কলেজটি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং সকলেই উত্তীর্ণ হয়, ফলে পাশের হার দাঁড়ায় শতভাগ। এর মধ্যে ৬৯২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে কলেজের গৌরব আরও বৃদ্ধি করেছে।

সেইন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়
খ্রিষ্টান মিশনারি তথা হলিক্রস সন্ন্যাস সংঘের যাজকদের দ্বারা পরিচালিত আরেকটি মিশনারি বিদ্যাপীঠ সেইন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্বে ‘সেইন্ট জোসেফ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ নামে পরিচিত ছিল। এটি প্রতিষ্ঠা করে আমেরিকান খ্রিষ্টান যাজেরা। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ক্যাম্পাস ছিল পুরান ঢাকার নারিন্দায়, পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে ঢাকার আসাদ এভিনিউয়ে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এখানে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পাঠদান করা হয়। 

আরও পড়ুন: একাদশে ভর্তি: শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ ও সফল বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। গত বছর (২০২৪ সালে) এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৩১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৭ জন।

ঢাকা কমার্স কলেজ
ঢাকা কমার্স কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত একটি সম্মানিত উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি ঢাকা মহানগরীর প্রথম বাণিজ্য বিশেষায়িত কলেজ হিসেবে পরিচিত। এখানে শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই পড়াশোনা করতে পারে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা কমার্স কলেজ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। এ বছর কলেজ থেকে মোট ৩ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কলেজটি থেকে সর্বমোট ৮৪০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ‑৫ পেয়েছিলেন। বিভাগভিত্তিক ফলাফল অনুযায়ী, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৭৩৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছন। অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকেও ১০৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।

আরও পড়ুন: এসএসসিতে সায়েন্স, এইচএসসিতে কমার্স কিংবা আর্টস চান— বিভাগ পরিবর্তনে সুবিধা-অসুবিধা কী?

লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ
লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ একটি প্রখ্যাত সরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার লালমাটিয়া বি-ব্লকে অবস্থিত। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এখানে বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক কোর্সের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পাস, সম্মান, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি এবং ফাইনাল কোর্স রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে গতবার অর্থাৎ ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৬০৯ জন অংশ নেন। এরমধ্যে করেন ৫৯৫ জন। এ-প্লাস পেয়েছিলেন ১১৪ এবং অকৃতকার্য হয়েছিলেন ১৪ জন। বিজ্ঞান বিভাগে এ-প্লাস ৯৪, মানবিকে ১৪ ও ব্যবসা শিক্ষায় ৬ জন এ-প্লাস পান।

আরও পড়ুন: ৯ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ১ হাজার ৪৭৮ শিক্ষার্থী

সেইন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ সেরা কলেজদের একটি। এটি একটি ক্যাথলিক উচ্চ বিদ্যালয়। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ১৮৮২ সালে বেলজিয়ামের বেনেডিক্টাইন ধর্মযাজক গ্রেগরি ডি গ্রুট প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এখানে বাংলা মিডিয়ামের পড়াশোনা শুরু করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধু বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা চলতে থাকে। তবে ২০০৮ সালের দিকে আবার ইংরেজি ভার্সন চালু করা হয়। ২০১৬ সালে স্কুলটিকে কলেজে উন্নীত করা হয়। কলেজটি থেকে ৩৭৮ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩৭৭ জন পাস করেছেন। পাসের হার ৯৯.৭৪ শতাংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাটি থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০১ জন। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩৭৮ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৭৫ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ২৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেন। অপর দিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৭৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৭৪ জন পাস করেন। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছের ১৯৬ জন।

এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ র‍্যাংকিংয়ে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫ কলেজের মধ্যে প্রথম হয়েছে রাজশাহী কলেজ। এরপর পর্যায়ক্রমে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ। জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ নির্বাচিত হয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, ঢাকা। জাতীয় পর্যায়ে সেরা সরকারি কলেজ রাজশাহী কলেজ। জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারি কলেজ ঢাকা কমার্স কলেজ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র‌্যাংকিং-২০১৮ এর ফলাফল ঘোষণা করেছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা অঞ্চলের সেরা কলেজগুলো হলো ঢাকা কমার্স কলেজ, ঢাকা; তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা; লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, ঢাকা; সরকারি সা’দত কলেজ, টাঙ্গাইল; সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর; সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ; আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা; হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, ঢাকা; সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা ও সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, ঢাকা।