বদলিজনিত কারণে ৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ, ঋণ করে সংসার চলছে অনেক শিক্ষকের
- ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩১
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার একটি এমপিওভুক্ত স্কুল থেকে বদলি হয়ে অন্য স্কুলে যোগদান করেন মো. সাইফুল্লাহ। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা পেলেও জানুয়ারি মাস থেকে তা পাচ্ছেন না। ৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তার মতো করে এমন অনেক শিক্ষক বদলিজনিত কারণে বেতন পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, বদলি হয়ে আসার পর ফ্রেব্রুয়ারি মাসে পূর্বের স্কুল থেকে ইনডেক্সসহ নাম রিলিজের জন্য আবেদন করি। পরে আমাদের এমপিও সম্পন্ন হয়। কিন্তু ইএফটিতে নাম যুক্ত করতে আবেদন দেখাচ্ছে না। আর মাউশি বলছে, বদলির পর এমপিওর জন্য ইএফটিতে নাম যুক্ত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে তথ্য দিতে হবে।
জানা গেছে, একজন শিক্ষক এক স্কুল/কলেজ থেকে আরেক স্কুল/কলেজে বদলি হতে হলে তাকে প্রথমে পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে এমপিও রিলিজ করতে হয়। এতে ২ মাস সময় লেগে যায়। পরে নতুন প্রতিষ্ঠান হতে ট্রান্সফার এমপির জন্য আবেদন করতে হয় এবং মাউশি পরবর্তী ২ মাসের মধ্যে (কোন সমস্যা না থাকলে) এমপিও সম্পন্ন (ডান) করে থাকে।
আরও পড়ুন: শিক্ষক-কর্মচারীদের জুন মাসের বেতন কবে, জানাল মাউশি
এ ছাড়াও একজন শিক্ষকের এমপিও আবেদন প্রতি দুই মাস পর পর হয়ে থাকে। প্রত্যেক জোড় মাসের ৬ তারিখের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে আবেদন করতে হয় এবং প্রত্যেক বিজোড় মাসে মাউশি এমপিওগুলো নিষ্পত্তি করে থাকে সাধারণত।
তবে মাউশি বলছে, এমপিও সম্পন্ন (ডান) হওয়ার পর ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) বদলিকৃত শিক্ষকের তথ্য দেবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক। তথ্য না দিলে ইএফটিতে নাম যুক্ত হবে না এবং বেতন চালু হবে না।
মাউশি সূত্রে জানা যায়, বদলির সময় প্রতি জোড় মাসে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ শিক্ষকের এমন অভিযোগ বা সমস্যা হয়ে থাকে। এবং তা ধীরে ধীরে সমাধানও হয়ে যায়। এ ছাড়াও চলতি মাসে প্রায় ৪৫ শিক্ষকের এমপিও ডান হয়ে থাকলেও তথ্য না থাকায় ইএফটিতে নাম যুক্ত হচ্ছে না।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৪ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন পেয়ে থাকেন। তবে বদলিজনিত কারণে এ পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা নিয়ে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মাউশির প্রদর্শকসহ ৬১০ পদের সেই ‘বির্তকিত নিয়োগের’ চূড়ান্ত ফল সহসাই হচ্ছে না
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, জানুয়ারি থেকে বেতন না পাওয়ায় ধার-দেনা করে চলছি। ঈদুল আজহায় বাচ্চাদের জন্য কোনো কিছু কিনে দিতে পারেনি। এতদিন ধার করে চললেও এখন আর কেউ দিচ্ছে না। খুব অসহায় অবস্থায় আছি।
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, জুন মাসেরও বেতন ছাড়ের সময় হয়ে আসতেছে। এটাতেও বেতন না আসলে মান সম্মান বাঁচানো দায় হয়ে যাবে। ঋণ করতে করতে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আর ঋণও পাচ্ছি না। সবাইকে বলেছি বেতন হয়ে যাবে, বেতন হলেই দেনা পরিশোধ করা হবে। এখন প্রতারক হয়ে যাচ্ছি।
মাউশির এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেলের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বদলিজনিত কারনে প্রতি জোড় মাসেই প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ শিক্ষকের এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। বদলিকৃত শিক্ষকের তথ্য পেলেই ১০ থেকে ১৫ দিনের ভেতর ওই শিক্ষকের জাতীয় পরিচয় পত্র ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্রস চেক করে বেতন চালু করে দেওয়া হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেসব শিক্ষকদের বেতন চালু হয়ে যায়, তাদের বকেয়া থাকা বেতনগুলোও একেবারে দিয়ে দেওয়া হয়। তবে বেতন চালু হওয়ার পর তা দেওয়া দিয়ে দেওয়া হয়।