প্রতিপক্ষ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়ার জেরে হামলা, ভ্যানচালক নিহত

বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রাম
বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রাম © সংগৃহীত

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংসের ভাগ নেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলায় হুমায়ূন কবীর (৪৮) নামে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। সোমবার (৯ জুন) সকালের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এর আগে রবিবার (৮ জুন) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত হুমায়ুন কবির ওই গ্রামের মৃত মালেক মোল্লার ছেলে। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বানিয়ারী গ্রামের আধিপত্য নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জামাল হোসেন ও নবীর হোসেন চুন্নু। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন লিয়াকত হোসেন। লিয়াকত হোসেন পাশের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। অপরদিকে জামাল হোসেন সাবেক ইউপি সদস্য এবং নবীর হোসেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালমারী পল্লি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি।

সংঘর্ষে মৃত্যু হওয়া হুমায়ূন কবীর আগে লিয়াকত হোসেনের সমর্থক ছিলেন। তবে শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহার দিন তিনিসহ লিয়াকতের কয়েকজন সমর্থক জামাল হোসেনের বিলি করা কোরবানির মাংস গ্রহণ করেন। এ নিয়ে ঈদের দিন থেকে ওই গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বানিয়ারী গ্রামের ছাকেনের চায়ের দোকানে লিয়াকত ও তার সমর্থকদের সঙ্গে হুমায়ুন কবিরসহ তার পরিবারের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে লিয়াকতের সমর্থকরা হুমায়ুন কবিরের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন হুমায়ূন কবীর। এছাড়া হুমায়ুন কবিরের বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা (৫৭), তার মেয়ে বেনি বেগম (২৩) ও এক ভাগনে আহত হন। তারা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুন: ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার—শীর্ষ তিন পদ পূরণে ব্যর্থ দেশের ১০১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আহত অবস্থায় হুমায়ূন কবীরকে রোববার সকালে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে সেদিন বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সোমবার সকালে তিনি মারা যান।

নিহতের ভাতিজা ছোলনা সালামিয়া মাদরাসার শিক্ষক মো. ফসিয়ার রহমান মোল্যা বলেন, লিয়াকত মাস্টারের দল ছেড়ে নবীর হোসেন চুন্নুর দলে যোগ দেওয়ায় লিয়াকতের লোকজন আমাদের ওপর আক্রমণ করতে চেয়েছিল। ঘটনার দিন আমার দুই চাচাকে একা পেয়ে তারা আক্রমণ করে। এটা গ্রাম্য কোন্দল। দুই গ্রুপেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক রয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেনের পক্ষের নবীর হোসেন চুন্নু বলেন, হুমায়ূন কবীর আগে লিয়াকত হোসেনের দেওয়া কোরবানির মাংস নিত। এবার আমাদের কাছ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়ায় লিয়াকতের সমর্থকরা এ হামলা চালায়। এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। হুমায়ুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ এলাকায় এনে দাফন করা হবে।

এ ঘটনার পর লিয়াকত হোসেন পলাতক রয়েছেন। সোমবার দুপুরে তার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা বলেন, গ্রাম্য প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাতে মৃত্যুর গুজব রটিয়ে কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু লুটের ঘটনা ঘটে। তবে একটি বাদে লুট হওয়া বাকি গরু উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: স্ট্যাটাস দিয়ে রাজনীতি থেকে বিদায়ের ঘোষণা ছাত্রদলের ‘অব্যাহতিপ্রাপ্ত’ নেতার

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, নিহত ব্যক্তি আগে লিয়াকতের সমর্থক ছিলেন তবে এ বছর তিনি জামাল হোসেনের পক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়ায় এ হামলা ও নিহতের ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে রোববার রাতে কিছু ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ বিষয়ে থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।