ব্যাপক হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস, ঠেকাতে যে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
- ১১ জুন ২০২৫, ১৭:২৫
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বর্তমানে প্রতি ১১ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত। এখন দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। এই চিত্র বাংলাদেশকে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দেশের তালিকায় ৮ম স্থানে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৪৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ৭ম অবস্থানে পৌঁছে যাবে।
ডায়াবেটিসের বিশেষায়িত সেবার হাসপাতাল বারডেমের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হলো জীবনধারার পরিবর্তন (লাইফস্টাইল চ্যাইঞ্জ) ও প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ (মেডিকেশন) সেবন। জীবনধারা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে সুষম ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ, দুশ্চিন্তা কমানো এবং প্রতি রাতে অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো। এ অভ্যাসগুলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অংশ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি আরও বলেন, যাদের প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাদের জন্য ওজন কমানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ পর্যায়ে মেটফরমিন নামক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় এবং কেউ কেউ স্বাভাবিক অবস্থায়ও ফিরে যেতে পারেন। মেটফরমিন মূলত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ—দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর। তাই সচেতন জীবনযাপন ও সঠিক চিকিৎসার সমন্বয়েই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব। ডায়বেটিস হলো ফেমিলি বার্ডেন, সোশাল বার্ডেন ও ন্যাশনাল বার্ডেন। ডায়াবেটিসের জটিলতা (কম্প্লিকেশন) যেন না হয়, সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। আর যদি কোনো জটিলতা শুরু হয়েও যায়, তাহলে তা যেন আর না বাড়ে, সেই দিকেও নজর দিতে হবে।
আরও পড়ুন: সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর তারিখ ঘোষণা
ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দৈনন্দিন জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো ওজন কমানো, ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা এবং রাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। সারাদিন ঘুমিয়ে থেকে রাতে জেগে থাকার অভ্যাস শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
শারীরিক অনুশীলন বাড়ানো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটা, গাড়ি বা বাস থেকে নেমে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং অফিস বা বাসায় দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে না থাকা—এ অভ্যাসগুলো ক্যালরি খরচ বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এমনকি প্রতি ১৫ মিনিট পরপর উঠে দাঁড়ানো কিংবা কিছুক্ষণ হাঁটা উপকারী। এ অভ্যাসগুলো শুধু রোগীদের জন্য নয়, চিকিৎসক ও অফিসে কর্মরত সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ শরীর যত সচল থাকবে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সক্ষমতাও তত বাড়বে-তিনি যোগ করেন।
আরও পড়ুন: জামায়াতের নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বহাল: শিশির মনির
বারডেম সূত্রে জানা যায়, গ্রাম ও শহর—দুই জায়গাতেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে এবং এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো জীবনে প্রযুক্তিনির্ভরতা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। আগের দিনে রিকশা চালাতে হলে চালককে প্যাডেল চালিয়ে কায়িক পরিশ্রম করতে হতো, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ছিল। কিন্তু এখন গ্রাম ও শহরজুড়ে ইঞ্জিনচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সে কায়িক পরিশ্রম আর থাকছে না। ফলে শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমছে।
সূত্র আরও জানায়, খাদ্যাভ্যাসেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে মানুষ সবজি খেত, এখন তা বদলে গিয়ে পরোটা, মাছ, ডিমের মতো উচ্চক্যালরিযুক্ত খাবার খাচ্ছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এই ‘আরবানাইজড’ খাদ্যাভ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে প্রতিদিনের ক্যালরি গ্রহণ ২ হাজার থেকে বেড়ে এখন প্রায় ৩ হাজার হয়ে গেছে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হলে আবারও শারীরিক পরিশ্রম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যেতে হবে।