সিলেটের আকাশে ঝলমলে রোদ, স্কুলে যেতে বইখাতা শুকাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

বন্যার পানিতে ভেজা বই রোদে শুকানোর দৃশ্য
বন্যার পানিতে ভেজা বই রোদে শুকানোর দৃশ্য  © ফাইল ছবি

সিলেটে নির্মল আকাশে ঝকঝকে রোদের দেখা মিলেছে। বৃষ্টিহীন দিনে রোদ বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় স্বস্তি এনেছে। ১০-১২ দিন পর ঘরবাড়ি থেকে পানি নামলেও কাদার আস্তরণ ছিল। গতকাল শনিবার তীব্র রোদের তাপে এখন বাসযোগ্য হচ্ছে চারপাশ। 'সুয্যি মামার' দেখা পেয়ে কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শিশুরাও, বন্যায় ভিজে নষ্ট হওয়া বইখাতাগুলো শুকাতে ব্যস্ত তারা।

পানি নামার পর ঘরে ফিরে অধিকাংশই দেখে আসবাবপত্রের পাশাপাশি তাদের বইপত্রও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ছামাউরাকান্দি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফা জানায়, তাদের ঘরে পানি উঠেছিল। অন্য সবকিছুর সঙ্গে তার ও ছোট বোন আফরোজার বইপত্র ভিজে যায়। রোদে শুকানোর চেষ্টা করছে।

ছামাউরাকান্দি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রইছ আলীর দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ূয়া মেয়ে রিমা রোদে বইখাতা শুকাতে দিয়েছে। সে বলে, আবার স্কুলে যাব। তাই বইখাতা লাগবে। ভিজে বইয়ের অনেক পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। খাতাগুলো শুকিয়ে লেখার উপযোগী করার চেষ্টা করছে শিশুটি। আরিফা-আফরোজাদের বাবা প্রবাসী মফিজ আলী। রিমার বাবা রইছ আলী জানান, বন্যায় ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এগুলো মেরামত করতে হবে। ধান-চালও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। সন্তানের লেখাপড়ার জন্য তাদের বইখাতাও লাগবে, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।

শিশুদের বইখাতার পাশাপাশি ভয়াবহ বন্যায় জেলায় অনেক স্কুল ভবন ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পুরো জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে; যার মধ্যে এক হাজার ৯২টি প্লাবিত হয়। বন্যাকবলিত স্কুলগুলোর মধ্যে ৮৯৪টি স্কুল কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্কুলের অবকাঠামো, আসবাবপত্র, বইপত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র পানিতে নষ্ট হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকা করা হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা হয়নি।

সিলেট সুরমা-কুশিয়ারাসহ সবক'টি নদনদীর পানি কমলেও চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাজারো বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখনও অনেক স্কুলে পানি রয়েছে। আবার উপজেলা পর্যায়ে অনেক স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে শাখাওয়াত এরশেদ বলেন, বন্যায় অনেক শিক্ষার্থীর বইপত্র, খাতা ভিজে নষ্ট হয়েছে। যতটুকু সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার চেষ্টা হচ্ছে।

এক মাসের ব্যবধানে সুরমা নদীর তীরে নগরীর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা তলিয়ে যায়। গোয়াইনঘাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে। দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে পানি রয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকার যেসব স্কুলে পানি ওঠেনি, সেগুলোতেও আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। ফলে চলতি বন্যায় শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মহামারি করোনা কাটিয়ে শিক্ষাঙ্গনগুলো স্বাভাবিক হওয়ার সময়ে এই দুর্যোগ আবার শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দিয়েছে।

সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৩৮১টি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ৩২৪টি বন্যাকবলিত হয়। এসব স্কুলের ১৭৯টিতে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হয়। একইভাবে ৬৭টি কলেজের মধ্যে ৩৮টি প্লাবিত হয় এবং ১৮টিতে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়। সব মিলিয়ে ১৫৯টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৪৯টি বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল। বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষজন ৫৩টি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, বন্যার ক্ষতি এখনও নিরূপণ করা হয়নি।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও কুশিয়ারার পানি কমছে খুব ধীরে। এক দিনে কানাইঘাটে সুরমার পানি দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার কমেছে। অবশ্য এই পয়েন্টে এখনও দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অমলসিদে কুশিয়ারার পানি সর্বোচ্চ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার কমেছে। তার পরও এখানে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শ্যাওলা পয়েন্টে মাত্র দশমিক শূন্য ৬ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে দশমিক শূন্য ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।

আগামী ১০ দিন নতুন করে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। 


সর্বশেষ সংবাদ