অবসর ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ৫২ হাজার শিক্ষক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:১১ AM , আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:১৯ AM
শেষ জীবনে এসে টাকা না পেয়ে অনেক শিক্ষক অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। টাকার অভাবে অনেকের চিকিৎসা হচ্ছে না। আটকে আছে অনেকের কন্যার বিয়ে। অবসরে গিয়ে টাকার অপেক্ষায় থেকে কেউ কেউ মারা গেছেন এমন নজিরও আছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ভাতা ও কল্যাণ সুবিধার অর্থের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এদের মধ্যে ৩২ হাজার ৬০০ জন অবসর বোর্ডে এবং ১৯ হাজার ৪৬০ জন কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন করেছেন।
আরও পড়ুন: শূন্য পদের বিপরীতে হবে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি
দেশে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা অবসরে গেলে অবসর বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু দিন দিন অর্থ-দাবির আবেদনের পাহাড় জমছে সংস্থাটিতে। চাহিদার তুলনায় অর্থের প্রবাহ কম বা তহবিল ঘাটতিই এর প্রধান কারণ বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অবসর বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, এটা ঠিক যে ৩২ হাজার ৬০০র মতো শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন জমা আছে। করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই প্রতিদিনই কেউ না কেউ প্রাপ্য অর্থের তথ্য জানতে এই ভবনে আসছেন। কিন্তু তহবিল সংকটের কারণে চাহিদামতো সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। একাধিক দফায় বিশেষ বরাদ্দ মাধ্যমে অনেকের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রায় একই কথা বলেন কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব শাহজাহান আলম সাজু। তিনি বলেন, অবসরে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষকদের কথা শেখ হাসিনার আগে কেউ এভাবে ভাবেনি। যে কারণে জট অনেক কমেছে। যেহেতু সবাইকে প্রতিমাসে বিদায় করা যাচ্ছে না, তাই জট তৈরি হচ্ছে। জট দূর করতে হলে ঘাটতির অর্থ পূরণে নিয়মিত বাজেট থেকে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে বরাদ্দ দিতে হবে। এছাড়া বিশেষ বরাদ্দও প্রয়োজন।
জানা গেছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মোট অবসর ভাতার দাবিদার ছিলেন ২২ হাজার ৪৩৩ জন। গত ১৬ মাসে জট বেড়ে অপেক্ষমাণের তালিকায় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬০০। ২০১৬ সালে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ হাজার। শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্টের কথা জেনে পরপর তিন অর্থবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোর্ডকে ১৩১৭ কোটি টাকা দেন। এ কারণেই অল্পসময়ে ভুক্তভোগীর সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে। পরে বড় আকারের আর কোনো বিশেষ বরাদ্দ বা নিয়মিত বরাদ্দ না হওয়ায় ফের জট বেড়েছে।
সম্প্রতি কথা হয় শাহনাজ আকতার নামের এক আবেদনকারীর স্বজনের সঙ্গে। পটুয়াখালীর বাউফলের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন তার শ্বশুর মো. ইউনুস আলী। ২০১৯ সালের জুনে অবসরে গেছেন তিনি। এরপর অবসর বোর্ড আর কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থের জন্য ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন। এর মধ্যে ২৮ মাস চলে গেছে, অর্থের আশায় থাকতে থাকতে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অবসর বোর্ড বর্তমানে ২০১৯ সালের মার্চের আবেদনকারীদের অর্থ পরিশোধ করছে। এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত যে সাড়ে ৩২ হাজার আবেদন জমা আছে, সেগুলোর বিপরীতে প্রাপ্য পরিশোধে প্রয়োজন ৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রতিমাসে গড়ে ৮৩৩টি আবেদন এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তিতে প্রতিমাসে দরকার ৯৫ কোটি টাকা।
অবসর সুবিধা হিসাবে একজন সহকারী শিক্ষক গড়ে ১১ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। আর একজন কর্মচারী সর্বনিু সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পান। কলেজের অধ্যক্ষ সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পান।
২০০২ সালে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা দেয়া শুরু হয়। আইন অনুযায়ী শিক্ষকরা প্রতিমাসে এমপিও বা বেতন থেকে চাঁদা দেবেন। শুরুতে এটা ৪ শতাংশ ছিল। পরে এটা ৬ শতাংশ করা হয়।
আরও পড়ুন: শীতের বৃষ্টিতে হাঁটুপানি আগে কখনো দেখেনি নগরবাসী
২০১৬ সালে অবসর বোর্ডকে প্রধানমন্ত্রী ৬৫০ কোটি টাকার অনুদান দেন। এরমধ্যে ৫০০ কোটিই দেন স্থায়ী তহবিল হিসাবে। পাশাপাশি ২০১৭ সালে ১০০ কোটি ও ২০১৮ সালে ৫৩২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী। থোক বরাদ্দের টাকায় শিক্ষকদের সুবিধা দেয়া হয়। যে কারণে আবেদনকারী অর্ধেকে নেমে আসে। আর স্থায়ী তহবিল এফডিআর করা হয়। বর্তমানে ৬১০ কোটি টাকার এফডিআর করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আরও ৩৫ কোটি টাকা স্থায়ী তহবিল হিসাবে দেয়া হয়।
এদিক থেকে অবশ্য কল্যাণ ট্রাস্ট এক বছর এগিয়ে। সংস্থাটি বর্তমানে ২০২০ সালের মার্চের আবেদনকারীদের অর্থ পরিশোধ করছে। সেখানে আবেদন অনিষ্পন্ন আছে ১৯ হাজার ৪৬০টি। এগুলো নিষ্পত্তি করতে ১৬শ কোটি টাকা দরকার বলে জানান এই সংস্থার সচিব শাহজাহান আলম সাজু।
তিনি বলেন, এই সংস্থায় আবেদনের জট দূর করতে ইতঃপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ দফায় মোট ৩৮৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। সেই টাকার কারণেই অনেকের প্রাপ্য অর্থ দেয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আবেদন বিবেচনায় প্রতিমাসে চাহিদা অন্তত ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু বিভিন্ন উৎস থেকে আয় হয় ৪১ কোটি। মাসে ১৯ কোটি ঘাটতি নিয়ে চলতে হচ্ছে।