ভাষা সৈনিক রেজাউল করিমের মৃত্যু
বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক রেজাউল করিম মারা গেছেন (ইন্না-লিল্লাহে ওয়া ইন্না-ইলাইহে রাজিউন)। বর্ষিয়ান এই ভাষাসৈনিকের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি তিন সন্তানের বাবা। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ বাসায় বার্ধ্যক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
জানা যায়, নারচী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে রেজাউল করিম প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৫০ সালে আজিমপুর ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্টিক (বর্তমানে এসএসসি) পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম নাইট কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে এইচএসসি এবং ৬২ সালে বিএ পাশ করেন।
আরও পড়ুন: ভাড়া নিয়ে বিতর্ক, বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা
পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ল’কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু দুই বছর অধ্যয়ন করার পরে নানা জটিলতার কারণে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। অদম্য এই ভাষা সৈনিক তার শিক্ষা জীবন থামিয়ে রাখেননি। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে অংশ নেন। সেখানে তিনি পুলিশের কাঁদানি গ্যাস ও লাঠিচার্জের শিকার হয়ে আহত হন। এছাড়াও পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি হরতালেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ১৯৬৩ সালে বহুজাতিক কোম্পানি লিভার ব্রাদারস লিমিটেডে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পূর্বে এমএম ইস্পাহানি কোম্পানিতে কিছুদিন চাকুরি করেছিলেন । তৎকালীন পাকিস্তান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে (সিআইপি) কর্মরত থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ১৯৭৩ সালে বদলি বিসিআইসি’র অধীনে ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জ কারখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকুরি করেন। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে ফেন্সুগঞ্জ সার কারখানার মহাব্যবস্থাপকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাবির ২২ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত
উল্লেখ্য, ভাষা সৈনিক মো. রেজাউল করিম ১৯৩৭ সালে ৪ এপ্রিল বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার নারচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা মৌলভি রাজিবউদ্দিন তরফদার ছিলেন বৃটিশ পার্লামেন্টের একজন জোরালো কন্ঠস্বর। তিনি একাধারে ৩৩ বছর বঙ্গীয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য (এমএলএ) ছিলেন। দাদার দেখানো পথেই তিনি অবসর গ্রহণ করার পরে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। শেরে বাংলা পদক, ভাষাসৈনিক ড. জসীমউদ্দিন স্মারক পদক, ভাষাসৈনিক মিলন মেলার ক্রেস্টসহ বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি । আজ জানাজার নামাজ শেষে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে মহান এ ভাষা সৈনিককে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।