৫০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫ গুণ বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি
১৯৭১ সালে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ছয়টি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে সেই সংখ্যা ১৫৮ তে গিয়ে পৌঁছেছে। এই ৫০ বছরে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ গুনেরও বেশি। তবে সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার গুণগত মান সে তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষাবিদদের।
তারা বলেছেন, দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই শিক্ষা কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে আমরা অনেক এগিয়ে গেলেও গুণগত মানের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে না পারা এর অন্যতম কারণ। এছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার না করায় এখনো সেভাবে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পায়নি। এর ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০টি। আর বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি। এর মধ্যে ১৯৭১ সাল কিংবা তার পূর্ব থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯২১ সালে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ১৯৯২ সালে।
আরও পড়ুন: বিজয় দিবসকে স্বাধীনতা দিবস উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু হলের নোটিশ
তথ্যমতে, ১৯২১ সালে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এরপর প্রতিষ্ঠা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৫৩ সালে তাদের যাত্রা শুরু করে। ১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি)। এরপর ১৯৬২ সালে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) তাদের যাত্র শুরু করে ১৯৭০ সালে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসে দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়ছে। তবে শিক্ষার মানসিক যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়নি। মুখস্ত নির্ভর শিক্ষা অর্জনের প্রবণতা এর অন্যতম কারণ। দেশে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে। এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে তাদের অভিমত।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর শপথ মঞ্চে ‘মুজিববর্ষ’ বানান ভুল
এছাড়া বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ‘রাজনৈতিক নেতা’ হওয়ার প্রবণতা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যবসায়িক মনোভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের পরিশ্রম এবং অর্থ ব্যয় করেও সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে পারছেন না। শিক্ষা থেকে এই দুটি বিষয়কে দূরে রাখতে পারলে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান কয়েকগুন বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের ও নিজের জীবন মানের উন্নয়ন করা। আমরা তত্ত্বীয় শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে বাস্তবিক শিক্ষাকে সে অর্থে গুরুত্ব দিচ্ছি না। এটি না করলে শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন হবে না। এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশৃঙ্খলায় ঢাবি উপাচার্যের ক্ষোভ
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার মানসিকভাবে যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, সেই জায়গা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এখন প্রয়োজন পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষা পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমপর্যায়ের। তবে এই সংখ্যা খুবই কম।
শিক্ষকদের ‘রাজনৈতিক নেতা’ হওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে এই শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষকরা যেকোন একটি দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ পোষণ করতেই পারেন। তবে পাঠদানের ক্ষেত্রে তার যেন কোন প্রভাব না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টর (সিইডিপি) এর এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশ।