কলেজছাত্রকে অপহরণ করে বিয়ে, সেই তরুণী ফিরে গেলেন বাবার বাড়ি

কলেজছাত্রকে অপহরণ করে বিয়ে, সেই তরুণী ফিরে গেলেন বাবার বাড়ি
কলেজছাত্রকে অপহরণ করে বিয়ে, সেই তরুণী ফিরে গেলেন বাবার বাড়ি  © সংগৃহীত

গত কয়েক দিন ইন্টানেটে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে এক তরুণকে জোর করে বিয়ের রেজিস্ট্রি করানো হচ্ছে। গত দুই দিন আগে কলেজছাত্রকে অপহরণ করে জোর পূর্বক বিয়ের পর ছেলের বাড়িতে অবস্থা করা সেই তরুণী ইশরাত জাহান পাখি। এবার খালি হাতে বাবার বাড়ি ফিরে গেছেন। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে তিনি বাবার বাড়িতে ফিরে যান।

এদিকে পাখির পক্ষ থেকে তার কথিত স্বামী নাজমুলসহ তিনজনকে আসামি করে ১২ অক্টোবর পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক মামলা করা হয়।

এ ব্যাপারে ইশরাত জাহান পাখির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জানান, পাখির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরেই তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর নাজমুল নানান অজুহাতে পাখির পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করেন। এ ঘটনায় পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের আগামী ৬ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: কলেজছাত্রকে অপহরণ করে বিয়ে করলেন তরুণী

পাখির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে জানাতে চাইলে আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইশরাত জাহান পাখির সঙ্গে নাজমুলের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন নাজমুল পটুয়াখালী থেকে তাকে অপহরণ করে বিয়ে করা হয়েছে বলে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। একই মানুষ একই দিনে দুই জায়গায় কীভাবে থাকে। এ বিষয়ে আমার মক্কেল আইনিভাবে মোকাবিলা করবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্র নাজমুল আকনকে (২৩) বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেম ও বিয়ের প্রলোভন দেখান ইশরাত জাহান পাখি (২৫) নামের ওই তরুণী। কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নাজমুলকে চোখ বেঁধে অপহরণ করা হয় তাকে। পরে ২৮ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে সাত থেকে আটজন ব্যক্তি একটি নীল কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। ধারণা করা হচ্ছে, এ দিয়ে তারা একটি কাবিননামা তৈরির পাঁয়তার করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাজমুল পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইশরাত জাহান পাখি (২৫) নামের ওই তরুণীসহ আরো অজ্ঞাত ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পটুয়াখালী সদর থানার ওসিকে এজাহার নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বিয়ের খবর সঠিক নয়: পাখি

এদিকে নাজমুলকে জোরপূর্বক বিয়ে করার একটি ভিডিও আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর মামলা দায়েরের পর ১৫ অক্টোবর দুপুরে ওই তরুণী নিজেকে নাজমুলের স্ত্রী দাবি করে নাজমুলের বাবা’র বাড়ি মির্জাগঞ্জে অবস্থান নেন। এ ঘটনায় পুরো মির্জাগঞ্জ এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।

নাজমুল মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগজ্ঞ ইউনিয়নের জালাল আকনের ছেলে এবং অভিযুক্ত নারী ইশরাত জাহান পাখি একই উপজেলার গাজিপুর এলাকার মো: আউয়াল হোসেনের মেয়ে।

নাজমুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ্ আল নোমান জানান, তার মক্কেল নাজমুল পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের নিয়মিত ছাত্র এবং সে সরকারি কলেজের আবাসিক হোস্টেলে থাকেন। আসামি ইশরাত জাহান পাখি দীর্ঘ দিন ধরে নাজমুলকে মোবাইল ফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাবসহ বিয়ের প্রলোভন দেখায়।

এ বিষয়ে ইশরাত জাহান পাখি বলেন, নাজমুলের সাথে তার দীর্ঘ দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং নাজমুল নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন। এখানে অপহরণ কিংবা জোরপূর্বক বিয়ে করার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ কারণে বর্তমানে তিনি নাজমুলের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনিরুজ্জামান জানান, আদালতের নির্দেশে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ