বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপ আদালতের নির্দেশ পরিপন্থী

'শিক্ষায় ভ্যাট না' প্রতিবাদ
'শিক্ষায় ভ্যাট না' প্রতিবাদ  © ফাইল ফটো

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ে আপিল বিভাগের পূর্ব নিষেধাজ্ঞার  মাঝে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে আয়ের ওপর আবারো ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত করারোপের সুযোগ নেই বলেই মত আইনজ্ঞদের।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনঃনির্ধারণ করা হলো। এটা এ বছরের ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে’।

কয়েক বছরের ব্যবধানে ২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজেও উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো’।

রাজস্ব বোর্ডের ওই প্রজ্ঞাপনের ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি আয়করের চাপ মাথাপিছু শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হয়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় ওই সময় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে মোট ৪৬টি রিট দায়ের করা হয়।

এরপর ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ৪৬টি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুই প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে ওই দুই প্রজ্ঞাপন অনুসারে যে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে এনবিআরকে নির্দেশও দিয়েছিলেন আদালত।

তখন সেসব রিট দায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেন, সংবিধানে চার জায়গায় বলা হয়েছে সরকার তার জনসাধারণের শিক্ষা নিশ্চিত করবে। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরুর দিকে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পড়াশোনা করতো। তবে সময়ের ব্যবধানে ও উপযুক্ত হারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে না তোলার কারণে সরকারিতে সুযোগ না পেয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাও এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।

একমাত্র পাকিস্তান ব্যতীত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ট্রাস্টের ওপর নির্ভর করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে এবং তাদের থেকে কোনও আয়কর নেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার ওমর সাদাত।

ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেন, আমাদের দেশে মূলত ট্রাস্টের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে থাকে। কিন্তু আয়কর বসিয়ে সরকার সে টাকা নিতে চাইছে।

কিন্তু এ মামলায় আপিল বিভাগ তার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে জানিয়েছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার কোনও আয়কর নিতে পারবে না। আপিল বিভাগের নির্দেশনা না মেনে সরকার এখানে আদালতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সরকার তাদের ভালো কাজগুলোর মধ্যে এমনটা না করলেও পারতো।

এদিকে ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। সে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এনবিআরকে অর্থ ফেরতের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আদালত।

একইসঙ্গে এই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৫ শতাংশ আয়কর নেওয়া থেকে এনবিআরকে বিরত থাকতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

এরপর থেকে মামলাটি আর শুনানি বা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এরই মাঝে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যা নিয়ে আইন অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।


সর্বশেষ সংবাদ