কাজী হতে পারবেন না বাংলাদেশের নারীরা
- বিবিসি বাংলা
- প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৫৮ PM , আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১, ১২:০৫ AM
বাংলাদেশের হাইকোর্ট রোববার প্রকাশিত এক রায়ে বলছে, সামাজিক ও শারিরীক বাস্তবতার কারণে সে দেশের নারীরা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বা কাজি হতে পারবেন না।
ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জানিয়েছেন, আদালত রায়ে বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুরের এক নারী নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার প্রার্থী ২০১৪ এ নিয়ে আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন।
রায়ে যা বলা হয়েছে
হাইকোর্ট এই রায়টি দিয়েছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। রোববার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণকে উল্লেখ করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জানিয়েছেন, মাসিকের কারণে একজন নারী প্রাকৃতিকভাবে প্রত্যেক মাসে একটি নির্দিস্ট সময়ে ধর্মীয় আচারাদি পালন করতে পারেন না।
‘‘একজন মুসলিম নারী ওই সময়ে নামাজ আদায় করতে পারেন না কিংবা মসজিদে যেতে পারেন না। ফলে ওই সময় কোন বিয়ের অনুষ্ঠান হলে তিনি কিভাবে সামলাবেন? এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে।’’ এছাড়া নারী হওয়ার কারণে একজন মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হিসেব দায়িত্ব পালনে কিছু সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার সূচনা যেভাবে
দু'হাজার চৌদ্দ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনজন মহিলার নাম প্রস্তাব করেছিল এক উপদেষ্টা কমিটি। সেই প্যানেলের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এরপর ২০১৪ সালের ১৬ই জুন আইন মন্ত্রণালয় 'বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়' এমন মত দিয়ে একটি চিঠি দিয়ে ঐ প্যানেল বাতিল করে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ঐ চিঠিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন নিকাহ্ রেজিস্ট্রার প্যানেলের একজন সদস্য আয়েশা সিদ্দিকা। এরপর রিটের শুনানি আমলে নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এর পর শুনানি শেষে এই রুলটি খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এই রায়ের ফলে নারীরা বাংলাদেশে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না - আইন মন্ত্রণালয়ের সেই সিদ্ধান্তটিই বহাল থাকলো। রিটকারীর আইনজীবী ফাউন্ডেশন ফর ল' অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করবে বলে জানা যাচ্ছে।
এর আগে সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে দেখা গেছে, ফাউন্ডেশন ফর ল' অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান প্রশ্ন তুলেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, তাহলে কেন নারীরা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না?- বিবিসি বাংলা