এলাচের কেজি ৬০০০, এক পিস ২ টাকা

এলাচ
এলাচ  © ফাইল ফটো

দফায় দফায় বাড়ছে এলাচের দাম। মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ এবং বছরের ব্যবধানে ছয়গুণ হয়েছে এই মসলাটির দাম। মাস বা বছর নয় সপ্তাহের ব্যবধান ধরলেও এলাচের দাম বেড়েছে হাজার টাকার ওপরে। দফায় দফায় দাম বেড়ে এখন রাজধানীর বাজারে এই পণ্যটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে এখন অনেক ব্যবসায়ী ১০-২০ টাকায় এলাচ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। খুচরা দোকানে ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ টাকার এলাচ কিনলে পাওয়া যাচ্ছে ১৫-২০টি। এতে একটি এলাচের দামই পড়ছে ২ টাকা করে।

এলাচের এমন দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে সরবরাহ। এ কারণে এলাচের দাম বেড়েছে।

বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে এলাচের কেজি ছিল ১৩০০-১৪০০ টাকার মধ্যে। তবে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে এ পণ্যটির দাম বেড়ে ১৫০০-১৬০০ টাকায় ওঠে। এরপর রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে মার্চে এই মসলাটির দাম ১৮০০-২০০০ টাকায় পৌঁছে যায়।

অবশ্য এখানেই থেমে থাকেনি মাংস রান্নার অপরিহার্য এলাচের দাম বাড়ার প্রবণতা। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে আবার হু হু করে বাড়তে থাকে পণ্যটির দাম। ফলে ২০১৯ সালের আগস্টে এলাচের কেজি ৩০০০ টাকায় পৌঁছে যায়। কোরবানির ঈদের পরও বাড়তে থাকে এলাচের দাম। গত বছরের ডিসেম্বরে এই পণ্যটির দাম বেড়ে ৪ হাজার টাকায় পৌঁছে। ২০১৯ সালজুড়ে দফায় দফায় দাম বাড়ার প্রবণতা চলতি বছরের শুরুতেও অব্যাহত। বছরের প্রথম ১১ দিনেই কেজিতে এলাচের দাম বেড়েছে ২০০০ হাজার টাকা।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্যেও। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগে এলাচের কেজি ছিল ১৫৫০-২০০০ টাকা। দফায় দফায় দাম বেড়ে শনিবার পণ্যটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০০-৬০০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০০০-৪৫০০ টাকা এবং একমাস আগে ছিল ৩০০০-৩৬০০ টাকা কেজি।

রামপুরার বাসিন্দা মো. আশরাফুল বলেন, শুক্রবার বাজারে গরম মসলা কিনতে গিয়ে দোকানির কাছে ২০ টাকার এলাচ চাই। দোকানি বলেন ভাই ২০ টাকার এলাচ দেয়া সম্ভব না। এখন এলাচের অনেক দাম। কমপক্ষে ৩০ টাকার নিতে হবে। এরপর ৩০ টাকার এলাচ নিলে দোকানি মাত্র ১৬টি দেন। দোকানিকে বললাম- ভাই এ কয়েকটা দিলেন। উত্তরে দোকানি বলেন- ভাই মাপে নিলে আরও কম পাবেন। এ পরিস্থিতিতে ৩০ টাকার এলাচ হাতে নিয়ে মনে মনে শুধু হেসেছি।

তিনি বলেন, বাজারে একের পর এক জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু দাম বাড়ার প্রবণতা ঠেকানো কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ছোট একটা এলাচের দাম ২ টাকা পড়ছে। বড় এলাচ হলে তো দাম আরও বেশি পড়বে। বিষয়টি একটু চিন্তা করে দেখেন। এটা কীভাবে স্বাভাবিক হয়। এভাবে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি দেখা উচিত।

মালিবাগ হাজীপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, আগে ১০ টাকার এলাচ কিনলে ১৫-২০টি পাওয়া যেত। এখন ১০ টাকা তো দূরের কথা ২০ টাকা দিয়েও এলাচ কেনা যায় না। অনুরোধ করলে ব্যবসায়ীরা ২০ টাকায় ৮-১০টি এলাচ দেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে মাংস রান্না করলে নামমাত্র এলাচ দেই। এতো দাম হলে এলাচ কিনে খাবো কীভাবে?

রামপুরার ব্যবসায়ী সামছু বলেন, পাইকারিতে আমরাই এক কেজি এলাচি কিনছি ৫ হাজার টাকায়। এই দামে কিনে কত বিক্রি করব আপনিই বলেন? আগে বেশিরভাগ ক্রেতাই ১৫-২০ টাকায় এলাচ কিনতেন। এখন এলাচের যে দাম ২০ টাকার এলাচ ওজনে বিক্রি করলে ৫-৬টা হবে। তাহলে ২০ টাকার এলাচ বিক্রি করা কি সম্ভব?

এলাচের এই দামের বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উলস্নাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলাচের দাম বেড়ে গেছে। ভারতেও এলাচের দাম বাড়তি। সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণেই এলাচের দাম বেড়েছে। এলাচ খুচরাই ৬ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হওয়া স্বাভাবিক কিনা? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পাইকারিতে আমরা এলাচের কেজি সাড়ে ৪ হাজার টাকা বিক্রি করছি। তাহলে খুচরায় ৬ হাজার টাকা কেজি হওয়া তো আমার মতে স্বাভাবিক না।


সর্বশেষ সংবাদ