৩ জানুয়ারি সমাবেশ করবে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ PM , আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ PM
সরকারি চাকরিতে উপসচিব পদে মেধার ভিত্তিতে শতভাগ পদোন্নতি, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদে আগামী ৩ জানুয়ারি সমাবেশের ঘোষণা করেছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করার কথা রয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে একত্রিত হওয়া সরকারি আমলাদের।
রবিবার (২৯ডিসেম্বর) রাতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন—৪ জানুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থাকায় আমাদের সমাবেশ একদিন এগিয়ে আনা হয়েছে।
মুহম্মদ মফিজুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের লোকজন আমাদের সমাবেশের সুযোগ নিয়ে যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে—সে জন্য তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আমরা সমাবেশ করব না। ২৫ ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা সমাবেশ অংশ নেবেন তাদের সবাইকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন না করে কেউ সমাবেশে অংশ নিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৩ জানুয়ারির মধ্যে: বদিউল
সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেয়া পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ৪ জানুয়ারি এই সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও ওই দিন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থাকায় সমাবেশ এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। সাম্প্রতিক বদলি, পদায়ন এবং ওএসডিসহ নানা কারণে দেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘটনার পাশাপাশি বাড়ছে নানা আশঙ্কাও।
এর আগে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা একই দাবিতে গত ২৪ ডিসেম্বর কলমবিরতি এবং ২৬ ডিসেম্বর মানববন্ধন করেছেন। উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও গত ২২ ডিসেম্বর সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান কর্মসূচি এবং ২৫ ডিসেম্বর বিয়াম মিলনায়তনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। যা চাকরি-বিধির লঙ্ঘণ এবং নজিরবিহীন বলে মনে করে জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্টরা।
বিগত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে আলাদা করে কমিশনের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: জনপ্রশাসন এখনো ব্রিটিশ নিয়মেই চলছে: বদিউল আলম
এরপরই রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কাঠামোয় আরও বেশি সংকট ঘণীভূত হয়। এখন পদোন্নতি, পদায়ন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে গত সাড়ে চার মাস ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে প্রশাসনে। পদোন্নতিতে কোটা কমানো হতে পারে এই শঙ্কা থেকে ক্ষুব্ধ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে সায় রয়েছে প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারাও।
সংকট-শঙ্কায় পরিস্থিতি বর্তমানে গিয়ে ঠেকেছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের পদত্যাগও দাবি পর্যন্ত। প্রশাসনিক এমন জটিলতায় কমেছে রাষ্ট্রীয় কাজের গতি। রুটিন কাজ ছাড়া বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে পারছে না প্রশাসন। এই সংকট কাটিয়ে নতুন বছরে প্রশাসনে গতি ফেরানো সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন নীতি নির্ধারকরা।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ আওয়ামী শাসনের অবসানের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে নানা সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কারে কমিশনও করে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়াও প্রশাসনে রদবদল, বাধ্যতামূলক অবসর, ওএসডি এবং বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের মতো ঘটনাও রয়েছে।