দেশ গড়ার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: জামায়াতের আমির

ডা. শফিকুর রহমান
ডা. শফিকুর রহমান  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সব জাতীয় ইস্যুতে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রয়োজন। এ দেশ কারও একার নয়, দেশ সবার। দেশ এখনো পনের বছরের জঞ্জালমুক্ত হয়নি। তাই সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই। মর্যাদাশীল দেশ গড়ার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরনির্ভরশীল নয়, কৃষি ও শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ গড়া প্রয়োজন। প্রভু নয়, বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র চাই। 

রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় ইস্টার্ন জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুনের পরিচালনায় এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।

আরও পড়ুন: সিভিল সার্ভিসে ‘ক্যাডার’ শব্দ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করবে কমিশন

সম্মেলনে জামায়াতের আমির বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেও আমরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি এবং শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করি। আমাদের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক অভূতপূর্ব সম্পর্ক এবং সম্প্রীতি। এটিই আমাদের সৌন্দর্য। এটি এদেশের মানুষের গর্ব। এমন সুন্দর একটা বাংলাদেশকে এলোমেলো করে দিয়েছিল একটা পরিবার, একটা গোষ্ঠী, একটা দল। এরা পরিবারকে দেখেছে আগে, এরপর দেখেছে গুষ্টিকে, এরপর দেখেছে দলকে। তারপর জুলুম চালিয়ে দিয়েছে জনগণের ঘাড়ে। যারা ছিল হিংসুক, সংকীর্ণমনা। এরা ছিল বেদরদী, বেপরোয়া। এরা না আল্লাহকে ভয় করেছে, না মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেছে। এরা মানুষকে মানুষ গণ্য করেনি। এরা মানুষের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছে। সেই জেল-জুলুম খুন এবং গুমের শিকার সারা বাংলাদেশের মানুষ।’

তিনি বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া পতিত স্বৈরাচার বলেছিল তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে দুই দিনের ভেতরে ৫ লাখ মানুষকে খুন করা হবে। আল্লাহর মেহেরবানীতে তার কিছুই হয়নি। আমরা ৫ তারিখে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলাম শান্ত থাকুন, ধৈর্য ধরুন, প্রিয় দেশকে ভালবাসুন। আলহামদুলিল্লাহ সারা বাংলাদেশে বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। এটা ছিটাফোঁটা যা ঘটেছে, তার জন্য আমরা লজ্জিত। একেবারে স্বল্প, ওটাও না ঘটলে আরও ভালো হতো। দেশবাসী প্রমাণ করেছে আমরা এ দেশকে ভালোবাসি, এটা আমাদের দেশ।

আরও পড়ুন: বিদেশি শক্তির মাধ্যমে ২১ আগস্ট হামলা চালানো হয়েছিল : মির্জা আব্বাস

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের দুটি দেশপ্রেমিক সংস্থাকে ধংস করে। প্রথমেই তারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করে। কিন্তু তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব এদেশের শান্তিকামী ছাত্র-জনতা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দিয়েছে।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উসকানি দিচ্ছে। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র হোক তা ব্যর্থ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশ এখনো জঞ্জাল ও স্বৈরাচারমুক্ত হযনি। তাই জাতীয় প্রয়োজনে জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’

আরও পড়ুন: প্রবাসে প্রভাব: যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিপুল সম্পদের সন্ধান

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ অঞ্চলের প্রধান দু’টি সমস্যা হলো মিল ও বিল। আওয়ামী লীগ আমলে ওই দু’টি ধ্বংস হয়েছে। একদিকে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে অপরদিকে বিল ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন জলাশয় দখল ও স্লুইচগেট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে মিলগুলো লোকসান হলেও তার দায়ভার চাপানো হয়েছে শ্রমিকদের ওপর। 


সর্বশেষ সংবাদ