ভারতে যেভাবে ১০০ দিন কেটেছে শেখ হাসিনার

বাংলেোদশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলেোদশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থান করছেন তিনি। ভারতে চলে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। কীভাবে আছেন,কোথায় আছেন, আগামীতে কোথায় যাবেন এমন অনেক প্রশ্ন খেলা করছে বাঙালি জনগণের মনে। ভারতে তার পদার্পণের একশ দিন হয়ে এলো। তাই এসব প্রশ্ন ওঠা টা এখন খুবই স্বাভাবিক।

শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রাখেন, দিল্লির বিশ্বাস ছিল তার এই আসাটা একেবারেই সাময়িক হবে। ইউরোপ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাওয়ার আগে এটা একটা সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি হবে বলেই মনে করেছিলেন ভারত।

ভারতের রাজধানী দিল্লির কেন্দ্রস্থলকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে যে ইনার রিং রোড, তার ঠিক ওপরেই চারতলা পেল্লায় বাড়িটা। ডাক বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী ঠিকানা ৫৬ রিং রোড, লাজপত নগর, দিল্লি ১১০০২৪।

লাজপত নগরের সেই ভবনে এসে ওঠার ঠিক ৪৯ বছর পর বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা যখন আরও একবার ভারতে এসে আশ্রয় নিলেন – তখনও কিন্তু শহরে তার প্রথম ঠিকানায় তিনি থিতু হননি। শেখ মুজিব আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন তার কন্যাকে সপরিবার ভারতে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রথমে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল এই বাড়িটিতেই। তখন ৫৬ রিং রোড ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ‘সেফ হাউজ’ বা গোপন অতিথিশালা।

শহরের দক্ষিণপ্রান্তে পাঞ্জাবি অধ্যুষিত ওই এলাকায় এই বাড়িটার আলাদা করে কোনও বিশেষত্ব চোখে পড়ার কোনও কারণ নেই! কিন্তু আসলে অনেকেই জানেন না প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে শেখ হাসিনা যখন প্রথম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার ঠিকানা ছিল রিং রোডের ওপরে এই ভবনটাই। পরে একাধিকবার হাতবদল হয়ে ওই ভবনটি এখন শহরের একটি ছিমছাম চার তারকা হোটেলে রূপ নিয়েছে। নাম ‘হোটেল ডিপ্লোম্যাট রেসিডেন্সি’।

আজ থেকে ঠিক একশ দিন আগে শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রাখেন তখন তাকে (ও সঙ্গে বোন শেখ রেহানাকে) রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকন্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিং-এই, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার দেশের বিমান বাহিনীর।

শেখ হাসিনার তৃতীয় কোনও দেশে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ভারত সরকার তাকে হিন্ডন থেকে সরিয়ে আনে দিল্লির কোনও গোপন ঠিকানায়। পরে তাকে হয়ত দিল্লির কাছাকাছি অন্য কোনও সুরক্ষিত ডেরাতে সরিয়েও নেয়া হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত কোনও তথ্যই প্রকাশ করেনি।

ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, সরকারি পদমর্যাদা ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতের ভিভিআইপিরা বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন– যার মধ্যে ‘জেড প্লাস প্লাস’-কেই সর্বোচ্চ বলে ধরা হয়। ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে, যিনি গত একশোদিন ধরে ভারতে শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত করেছেন, ক্ষুদে বার্তায় তিনি ছোট ছোট তিনটা বাক্যে এই প্রশ্নের যে উত্তর দিয়েছেন। 

প্রথমত হাসিনাকে চরম গোপনীয়তাই রাখা হয়েছে, দ্বিতীয়ত তাকে সাদা পোশাকের রক্ষীরাই ঘিরে রেখেছেন, আর তৃতীয়টি হলো তার মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়েছে।  ওই কর্মকর্তার কথা থেকে স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা খুব বিশেষ এক ধরনের আয়োজন–শেখ হাসিনাকে যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না-আসতে হয়, এই প্রোটোকলে সেই চেষ্টাও বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা অবশ্য সম্পূর্ণ আলাদা মানদণ্ডে আয়োজন করা হয়, ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ বা এসপিজি কমান্ডোরা সচরাচর বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলান।

দিল্লিতে থাকা মেয়ে সাইমা ওয়াজেদ এবং ভার্জিনিয়াতে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজেদের সঙ্গেও শেখ হাসিনার প্রায় রোজই যোগাযোগ হচ্ছে। নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটেও তার সম্পূর্ণ অ্যাকসেস আছে।

গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দিল্লিতে কংগ্রেসের একদা মুখপাত্র ও ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি টুইটে লেখেন, স্টে সেফ অ্যান্ড স্ট্রং, হাসিনা আন্টি। টুমরো ইজ অ্যানাদার ডে, মাই প্রেয়ার্স আর উইথ ইউ।

তবে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে যে দেশের আতিথেয়তায় আছেন তারা কিন্তু এখনই অতটা আগ বাড়িয়ে ভাবতে রাজি নয়। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা উপযুক্ত সুযোগ এলে সেটা কাজে লাগাবেন বলে অনেকে ধারণা করছে। একশ দিনের মাথায় ভারতও আপাতত এটুকুতেই তাদের ভাবনা সীমিত রাখছে!

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ