‘সংস্কারের নামে অযৌক্তিক কালক্ষেপণ করছে অন্তর্বর্তী সরকার’

গণ-সমাবেশে বক্তব্য দেন বাম সংগঠনের নেতারা
গণ-সমাবেশে বক্তব্য দেন বাম সংগঠনের নেতারা  © টিডিসি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের নামে অযৌক্তিক কালক্ষেপণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক কমরেড হারুন চৌধুরী। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক গণ-সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে নির্ধারিত সময়ে রাষ্ট্র সংস্কার কাজ শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয়  নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে গণ-সমাবেশ করে চারটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। 

এ ছাড়া সমাবেশে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও স্যেসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) নেতাকর্মীরা দেশকে প্রগতিশীল করার দাবি জানিয়েছেন।

ছাত্র জনতার-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্রুত করণীয় ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।

দাবিগুলো হলো
১. সংস্কারের নামে অযৌক্তিক কালক্ষেপণ না করে সংস্কার কমিশনের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা।

২. জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজের বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। সংস্কার কাজের পর্যালোচনা করে যোগ্যতার বিচারে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করে, কাজের গতি বাড়ানো। প্রয়োজনে নতুন যোগ্য উপদেষ্টা নিয়োগ প্রদান করা।

৩. স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে অংশীজন সব রাজনৈতিক দল ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী কৃষক শ্রমিক সুশীল সমাজের প্রতিনিদিদের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন অবস্থায় যেন দূরত্ব তৈরি না হয় সেদিকে সকল পক্ষের সতর্ক থাকা।

আরও পড়ুন: স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতন হলেও স্বৈরাচারী ব্যবস্থা এখনো বহাল: বাম ছাত্র সংগঠন

৪. দেশে এখনো একটা বৈরী অস্থিতিশীল গুমোট পরিস্থিতি চলছে। যে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, সেই জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারলেই পতিত স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। পতিত স্বৈরাচারের নানামুখী ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জাতীয় ঐক্য আরো সুদৃঢ় করা।

৫. সংস্কার একটি প্রবাহমান ধারা। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ ৬৩ রাজনৈতিক দল ও জোটের ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার সংস্কার কাজ নির্বাচন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে করা।

৬. মিথ্যাচারের জন্য রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। কোনো ধরনের হটকারিতা করে নতুন সাংবিধানিক সংকট তৈরি না করে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

৭. স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে আদালতে মামলা যেন জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়। অপরাধীরা যেন আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে।

৮. সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততায় সুযোগ সন্ধানীরা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

৯. দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি সাধারণ জনগণ আর শুনতে চায় না। নিত্যপণ্য ক্রয় ক্ষমতায় আনতে যা যা করণীয় করতে হবে। সারাদেশে ন্যায্যমূল্যে টিসিবি পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানো।

১০. শ্রমিক অসন্তোষ চিহ্নিত করে শিল্পাঞ্চলে মালিক শ্রমিক সকলের কাজের স্থান নিরাপদ করতে হবে। কেউ যেন অন্যায়ের শিকার না হয়, কাউকে বঞ্চিত না করা।

১১. বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। তাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফ করে নতুন করে কৃষি ঋণ দিতে হবে। সার বীজ কীটনাশক কৃষি যন্ত্রপাতি বিনা মূল্যে দিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ