ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি জেলায় জেলায়, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় ব্ল্যাক আউট বর্মসূচি পালন করেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় ব্ল্যাক আউট বর্মসূচি পালন করেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা  © সংগৃহীত

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঘটনার ফলশ্রুতিতে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের চার কর্মকর্তা এখন যৌথ বাহিনীর হেফাজতে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলায় ব্ল্যাক আউট (বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ) কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের চার কর্মকর্তাকে যৌথ বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের হেফাজতের বিষয়টি মূলজান পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে সদর উপজেলার মূলজান পল্লী বিদ্যুৎ অফিস প্রাঙ্গনে ব্ল্যাক আউট কর্মসূচির নেতৃত্বদানকারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম প্রশাসন রাজিবুল হাসান, এজিএম ইএমসি মো. হাসিব উদ্দিন, এজিএম গিয়াজ উদ্দিন খান শাকিল, ডিজিএম হরিরামপুর সামিউল কবিরসহ চার কর্মকর্তার নেতৃত্বে অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবস্থান নেন।

কর্মসূচি প্রত্যাহারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু না করায় দুপুর দেড়টার দিকে যৌথ বাহিনী ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়ে আসে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দুপুর আড়াইটার দিকে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস।

বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ বরিশালেও

জেনারেল ম্যানেজারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল থেকে বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জসহ কয়েক উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে বিদ্যুৎতের গ্রাহকেরা বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বৈঠক করে কিছু লাইন সচল করতে পারলেও বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে সচলের প্রতিশ্রুতি দেয়। 

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এবার ব্ল্যাক আউটের মতো কর্মসূচি দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ঘটনার বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও  যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

আন্দোলনে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও

মাঠ পর্যায়ের প্রায় ২০ কর্মকর্তা-কর্মচারিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছেন কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল দশটার পর থেকেই জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর এলাকায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর অফিসে কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন তারা। কুমিল্লাসহ দেশের কয়েক জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের ঘটনায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। 

বিদ্যুৎ অফিসের আন্দোলনকারীরা জানান , পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করাসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে দেশের ৮০টি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরই মধ্যে বুধবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ জন এবং বৃহস্পতিবার আরও ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আন্দোলনে নেমেছে তারা। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে  উত্তর রামপুর এলাকায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কুমিল্লা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল হান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরিজ, সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানমসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশে নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা।

গ্রাহকসেবা বন্ধ করে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে পিরোজপুর ও পাথরঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন ও চুক্তিভিত্তিক এবং অনিয়মিত সব কর্মচারীকে নিয়মিতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে বলে জানান পাথরঘাটা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার আব্দুস সালাম।

ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার আব্দুস সালাম আরো জানান, বিকেল ৩টা থেকে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকসেবা বাগেরহাট থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে পিরোজপুরের ৭ উপজেলায় ৪ লাখ ৫ হাজার সংযোগ বন্ধ রয়েছে। দাবি না মেনে উল্টো আমাদের ২০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এবং অনেক কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি বন্ধ করতে হবে। তাহলেই পিরোজপুর ও পাথরঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের সংযোগ চালু করা হবে। 


সর্বশেষ সংবাদ