ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়েছিলেন বাবা, এসে শুনলেন ছেলে নেই

  © ফাইল ফটো

ঢাকার মিরপুর এলাকার সাতাশ বছর বয়সী হাসিব ইকবাল একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে তার সরাসরি কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) এই আন্দোলনে মাঝে পড়ে মৃত্যু হয়েছে তারও। খবর সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার।

জানা যায়, হাসিবের বিয়ের জন্য পাত্রীর খোঁজ চলছিল। ঘটনার দিন শুক্রবারও তাঁর বাবা আব্দুল রাজ্জাক গিয়েছিলেন ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে। বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, ছেলে আর বেঁচে নেই। মৃত হাসিবের বাবা জানিয়েছেন, সেদিন শুক্রবারের নামাজে ছেলের সঙ্গেই যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তার দেরি হওয়ায় ছেলে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল নামাজের জন্য। পরে সেখানে গিয়ে তাদের আর দেখা হয়নি। নামাজ থেকে ফিরে ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা ছিল আব্দুলের। ফলে নামাজ শেষে তিনিও আর ছেলের জন্য অপেক্ষা করেননি। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন পাত্রী দেখতে।

সেদিন নমাজ শেষের পর আব্দুল বাড়ি ফিরে পাত্রী দেখতে বেরিয়ে গেলেও, ছেলে আর বাড়ি ফেরেনি। প্রায় তিন ঘণ্টা এভাবে অপেক্ষা করার পর দুশ্চিন্তা গ্রাস করতে থাকে পরিবারের লোকজনদের। আব্দুল যখন বাড়ি ফেরেন, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। কিন্তু তখনও হাসিব বাড়ি ফেরেননি। বাইরে তখন আন্দোলনের জন্য উতপ্ত পরিস্থিতি। আত্মীয়-পরিজন থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজখবর নিতে থাকেন তাঁরা। হঠাৎ সন্ধের দিকে বাড়িতে ফোন আসে। হাসিবের বাবাই ফোন ধরেন। সেই ফোনেই তিনি জানতে পারেন, ছেলে আর বেঁচে নেই।

স্বজনদের ধারণা, সম্ভবত দুপুরেই মৃত্যু হয়েছিল হাসিবের। তখন পুলিশ তার মরদেহ পাঠিয়ে দিয়েছিল ‘আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে’। হাসিবের মৃত্যুর পর প্রাথমিকভাবে পুলিশ তার মরদেহ শনাক্ত করতে না পারায় সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পরে সেখানের আব্দুলদের এলাকার কিছু লোক হাসিবের দেহ দেখে চিনতে পারেন। তখনই তারা ফোন করেন আব্দুলদের বাড়িতে এবং পুরো বিষয়টি জানান।

তার স্বজনরা জানান, হাসিব স্বভাবে বেশ শান্ত প্রকৃতির ছিলেন এবং বেকার না হওয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গেও তার কোনও সম্পৃক্ততা ছিলে না। তাহলে সহিংসতায় প্রাণ হারালেন কীভাবে?

হাসিবের বাবা আব্দুল রাজ্জাক বলেন, তাদের ধারণা (চিকিৎসকদের), সংঘর্ষ চলাকালে আমার ছেলে হয়তো পুলিশের টিয়ার শেলের মধ্যে পড়েছিল। ডাক্তার ওর ডেথ সার্টিফিকেটে লিখেছে যে, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে

তবে দাফন করার আগে হাসিবের বুকের কাছে ‘কালচে’ ধরনের দাগ দেখতে পেয়েছেন স্বজনরা। তার বাবা আব্দুল রাজ্জাক বলেন, কাফনে মোড়ানো থাকায় আমরা পুরো বডি সেভাবে দেখতে পারিনি। তবে ওর বুকের উপরের অংশে কালচে মতো একটা দাগ দেখা যাচ্ছিল।

যদিও বিষয়টি নিয়ে তিনি পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। আব্দুল রাজ্জাক বলেন, এগুলো করে আর কী হবে? আমার ছেলে তো আর ফিরে আসবে না।

তিনি বলেন, আমার একটামাত্র ছেলে, আমার বংশের প্রদীপ। ওকে এভাবে হারাবো, স্বপ্নেও ভাবিনি।


সর্বশেষ সংবাদ