ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ, ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য
বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য  © সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় লাখ লাখ কর্মজীবীর বসবাস। বছরের দুটি উৎসবে এসব মানুষের বড় একটি অংশ শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি যায়। আর ওই দুই উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতরেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ে।

এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে, প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে বাস ও রেলস্টেশন এবং লঞ্চঘাটে। ফলে ফাঁকা হয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকা। দ্রুত বদলে যাচ্ছে শহরের চিরচেনা ব্যস্ত রূপ।

শনিবার (৫ এপ্রিল) ভোর থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রয়েছে যাত্রীদের ভিড়। যাত্রীরা জানিয়েছেন, প্রায় সব ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে।

এছাড়া মহাখালী, গাবতলী, সায়েবাদ বাস টার্মিনালেও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের চাপ বেড়েছে। এতে টার্মিনালের আশপাশের সড়কে রয়েছে হালকা যানজট। তবে কোথাও কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

ঈদের আগে আগামী সোম ও মঙ্গলবার শেষ কর্মদিবস। অনেকেই এই দুদিন ছুটি নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হওয়ায় বাড়ি ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই ভিড় রয়েছে ট্রেন ও বাসে।

এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মনালেও ভিড় বাড়ছে। যাত্রী বাড়লে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হবে জানায় কর্তৃপক্ষ।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের পারাপার নিশ্চিত করতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট এলাকায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃংখলা বাহিনীর এক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঈদের তিনদিন আগে থেকে তিনদিন পর পর্যন্ত পচনশীল পণ্য ছাড়া সব ধরনের মালবাহী পরিবহন পারাপার বন্ধ রাখা হবে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার চারটি ঘাট দিয়ে চলবে ১৫টি ফেরি এবং আলাদা ঘাট দিয়ে চলবে ৩০টি লঞ্চ। আরিচা-কাজিরহাটের দুইটি ঘাট দিয়ে চলবে ৫টি ফেরি এবং আলাদা ঘাট দিয়ে চলবে ১৩টি লঞ্চ ও ৪১টি স্পিডবোট।

আরিচার বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘যদি ফেরিগুলো এসে সরাসরি লোড আনলোড করতে পারে তাহলে সেখানে গাড়ির সংখ্যা যতোই বৃদ্ধি পাক আমরা আশা করছি, আমাদের সেই সক্ষমতা আছে।’

লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানামা বন্ধে কাজ করবে নৌ পুলিশ। যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক হাজার সদস্য। দুইটি কন্ট্রোলরুম থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। থাকবে ৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঈদ উপলক্ষ্যে ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সেগুলো হলো-গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইন, সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বের হতে হবে। বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে এসে দরজা-জানালা খুলে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা যাবে না।

 বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। আগে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখতে হবে। রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে হবে।

নির্দেশনার মধ্যে আরও আছে-মোটরসাইকেল চুরি রোধে এলার্ম লাগাতে হবে। এতে কেউ মোটরসাইকেল স্পর্শ করলেই এলার্ম বেজে উঠবে। লক করার কাজে স্টিলের তৈরি মেরিন এংকর চেইন ব্যবহার করতে হবে। মোটরসাইকেলে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে এবং চাকাতে উন্নত মানের ডিস্ক লক ব্যবহার করতে হবে। দেশের কিংবা বিদেশের কোনো আইপিএস কিংবা বিসিএস কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা ইত্যাদি পরিচয়ে ফেসবুকে পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলে প্রতারিত কিংবা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হতে পারেন। সেজন্য এ ধরনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা উচিত হবে না। 

যার নাম-ঠিকানা আপনার জানা নেই এমন অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া ভিডিও কল গ্রহণ করবেন না। এরূপ ভিডিও কলে পাঠানো অশ্লীল ছবি কিংবা ভিডিও রেকর্ড করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতে পারে।

ডিএমপির নির্দেশনায় আরও রয়েছে-আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্ট কোনো ব্যক্তি বন্ধ করতে পারে না। এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার ভয় দেখিয়ে আপনার কাছ থেকে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কিংবা পিন নম্বর বিভিন্ন কৌশলে বারবার চাইতে পারে। এ ধরনের ফোনকল পেয়ে কোনো অবস্থাতেই পাসওয়ার্ড কিংবা পিন কোড দেওয়া যাবে না। ভুল করে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে-এমন ফোনকল পেলে যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। 

লটারি জিতেছেন কিংবা বিদেশ থেকে দামি উপহার কিংবা ডলার পাঠানো হবে এরূপ মোবাইল কল পেয়ে বিশ্বাস করবেন না। এয়ারপোর্ট কাস্টমসে কিংবা এনবিআর অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে প্রতারকরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের লোভে পড়বেন না।


সর্বশেষ সংবাদ