‘সমতলের তুলনায় খারাপ অবস্থানে পার্বত্য অঞ্চলের শিশুদের পুষ্টির অবস্থা’

আলোচনা সভায় অতিথিরা
আলোচনা সভায় অতিথিরা  © টিডিসি ফটো

দেশের গত ২০ বছরে পুষ্টির দিক থেকে বিশেষ করে বাংলাদেশ শিশু পুষ্টির উন্নতিতে বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। এরপরও দেশে জাতীয় ও বিভাগীয় অবস্থার তুলনা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিশুদের পুষ্টির অবস্থা তুলনামূলকভাবে খারাপ। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবহারের সচেতনতার অভাবের কারণে শিশুর শারীরিক বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপুষ্টিজনিত কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বিশেষ করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার শিশুদের বয়স অনুযায়ী যে উচ্চতা ও ওজন থাকার কথা সে অনুযায়ী কম আছে বলে উঠে এসেছে একটি গবেষণায়।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক এবং লিন প্রকল্পের সহ-আয়োজনে ‘এডভান্সিং নিউট্রিশন কমিটমেন্ট ফর চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক এ সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রুহুল আমিন তালুকদার।

সিরডাপ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় অতিথিরা। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. মো. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, বয়স অনুযায়ী শিশুদের যে উচ্চতা থাকার কথা তা জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে আছে ১০% সেখানে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় আছে যথাক্রমে মাত্র ৯% এবং ৪%। জাতীয় ও বিভাগীয় জেলাগুলোতে নিরাপদ খাবার পানি পাচ্ছে যথাক্রমে ৯৯% ও ৯৭% জনগণ, এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা যথাক্রমে মাত্র ৫৯% ও ৫৭%। পুষ্টির জন্য জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) অনুযায়ী, বাংলাদেশ শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানের ক্ষেত্রে ৯৮% সফলতা অর্জন করেছে।

এসময় তিনি লিন প্রকল্পের বেশকিছু অর্জন তুলে ধরে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পুষ্টি—সংবেদনশীল প্রোগ্রামিংয়ে ক্ষমতা এবং আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় শক্তিশালী হয়েছে; স্থানীয় জনগণ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও বাজার সংযোগের বিষয়ে প্রশিক্ষিত হয়েছেন; পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণে উন্নত কৃষকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা ক্ষুদ্র খামারকে উৎসাহিত করছেন; প্রাথমিক পুষ্টি এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে; ৩টি জেলা ও ১৮টি উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটি এখন পরিকল্পনা, পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়েছে ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: ভাগ অংশের সমাধান পারে না প্রাথমিকের ৯৫% শিশু

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশ ১২১ টি দেশের মধ্যে ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে। দেশের ১৮.৮ মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার। দেশের ১২ কোটিরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের সামর্থ্য নেই। ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ ৩৬.৭% (১৬.৮ মিলিয়ন)।

৫২.৩ মিলিয়ন মানুষ মাঝারি বা মারাত্মকভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের জন্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও টেকসই পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে, বিশেষ করে মা ও শিশুর যথাযথ পুষ্টি সম্প্রসারণে ২০১৮ সাল থেকে ‘লিডারশিপ টু এনশিওর এডিকিওট নিউট্রিশন- লিন’ প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে।

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন গেইন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার এবং সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন এর সুশাসন, অধিকার ও ন্যায্যতা কর্মসূচির উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা।

আরও পড়ুন: ‘মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মহসিন আলী বলেন, পরিবেশসম্মত কৃষি উৎপাদন না হলে নিরাপদ খাদ্য হবে না। আর নিরাপদ খাদ্য না হলে সকলের পুষ্টি নিশ্চিত হবে না। তাই পুষ্টি বিষয়ক আলোচনা শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্যদেরকেও এতে সম্পৃক্ত করতে হবে। সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করেই স্মার্ট বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে মো. মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির আগে যেখানে আমরা পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারতাম না সেখানে এখন সরকারের সহায়তায় প্রচুর উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটেছে। শুধু ভাতা বা খাদ্য সহায়তা দিয়ে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়, দরকার মানুষের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। শুঁটকি যদি পুষ্টির অন্যতম উপকরণ হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় গবেষণার মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিতকরণে সরকার কাজ করবে।

আলোচনা সভায় ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ নেটওয়ার্কের কার্যক্রম বর্ণনা করতে গিয়ে কানিজ ফাতেমা বলেন, ২০১৫ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, নিরাপদ খাদ্য, কৃষি, ভ‚মি, পানিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন এবং জাতীয় পর্যায়ে পলিসি এডভোকেসিসহ বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা নেটওয়ার্কের অন্যতম দাবি।


সর্বশেষ সংবাদ