একদিনেই ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশের দর্শনীয় স্থানে

একদিনেই ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশের দর্শনীয় স্থানে
একদিনেই ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশের দর্শনীয় স্থানে  © সংগৃহীত

ব্যস্ততার ভিড়ে একটু ছুটি মিললেই কোথায় ঘুরতে যাবেন তা নিয়ে পরিকল্পনার শেষ নেই। যানজট এড়িয়ে কম দূরত্বে যদি কোথাও যাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। আমরা আমাদের পরিবারের জন্য অক্লান্তভাবে চেষ্টা করে থাকি, আমাদের ব্যস্ত সময়সূচীর কারণে অনেক সময় আমরা বেড়ানোর জন্য সময় টুকু বের করতে পারি না।

একটি সুগঠিত পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা চাইলে পরিবারের জন্য সাপ্তাহিক একটি ছুটি বের করতে পারি। কিন্তু কোথায় যাবেন এটা ভাবতে ভাবতেই যেন দিন শেষ হয়ে যায়। ফলে ভ্রমণ পরিকল্পনা আর করা হয়ে ওঠে না।

ঢাকার আশেপাশে দেখার মত জায়গা গুলো ভ্রমণের জন্য এক দিনের ভ্রমণ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া যায়। প্রিয়জনদের সাথে ঢাকার আশে পাশে মনোমুগ্ধকর স্থান দেখার জন্য ভ্রমণ পরিকল্পনা সহজ করতে জেনে নিন ছুটির দিনে কোথায় যাওয়া যেতে পারে―

১. বালিয়াটি জমিদারবাড়ি

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি | যাতায়ত ডে ট্যুর এর ভ্রমণ খরচ বিস্তারিত
জমিদারবাড়িতে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সব সময়ই ভালো হয়। একটু পুরনো ঘ্রাণ, রাজকীয় চারপাশ, এসব যাদের টানে তারা কিন্তু ঢাকার অদূরেই মানিকগঞ্জে যেতে পারেন জমিদারবাড়ি ঘুরে দেখতে। ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটি গ্রামে বালিয়াটি জমিদারবাড়ি অবস্থিত। এই জমিদারবাড়ির রাজকীয় স্থাপনা ভালো লাগাকে গাঢ় করবে নিঃসন্দেহে। প্রতি সপ্তাহে রবি ও সোমবার অর্ধবেলা ছাড়া প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য গেট উন্মুক্ত থাকে।

২. জিন্দা পার্ক

ঘুরে এলাম জিন্দা পার্ক | ভ্রমণকাল
সবুজের মাঝে হারাতে চান যারা তারা কিন্তু ডে ট্যুর হিসেবে জিন্দা পার্ককে বেছে নিতেই পারেন। কম সময়ে ও কম খরচে ঘুরে আসার জন্য যেতে পারেন পূর্বাচল হাইওয়ের কাছেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত জিন্দা পার্কে। ঢাকা থেকে দূরত্ব মাত্র ৩৭ কিলোমিটার। খাওয়াদাওয়ার জন্য পার্কের ভেতরেই রেস্টুরেন্ট আছে। এ ছাড়া রাতে থাকার জন্যও আছে গেস্টহাউস। প্রবেশ টিকিট জনপ্রতি ১০০ টাকা।

এই যায়গা টা মুলত একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাঁত ।  জিন্দা পার্ক টিকে একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে দেখা হয়। পিকনিক অথবা ডে আউট করতে চাইলে এই খানে চলে আসতে পারেন । নিরিবিলি পরিবেশ বিন্দু পরিমান ঝামেলা নেই । সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি যায়গা। খাওয়া দাওয়ার জন্য পার্কের ভিতরেই রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া, রাতে থাকার জন্যেও আছে গেস্ট হাউজ।

৩. বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (ছবি ব্লগ) - Samiaety's bangla blog
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি অবস্থিত। পার্কের ভেতরের অংশকে আবার পাঁচটি অংশে ভাগ করা হয়েছে―কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান ডাইভার্সিটি পার্ক ও বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।

৪. ড্রিম হলিডে পার্ক

ড্রিম হলিডে পার্ক, নরসিংদী - ভ্রমণ গাইড
ছোট্ট সোনামণিকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে চান? তাহলে চমৎকার জায়গা হিসেবে ড্রিম হলিডে পার্ককে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। ঢাকার পাশেই নরসিংদী জেলায় অবস্থিত অন্যতম থিম পার্ক। পরিবার-পরিজনদের সারা দিন হৈচৈ আর আনন্দে মাতামাতি করতে অথবা পিকনিকের আয়োজন করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। রাতে থাকার জন্য রয়েছে রিসোর্টেরও সুব্যবস্থা। আর প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০০ টাকা।

৫. মৈনট ঘাট, দোহার 

ঘুরে আসুন মৈনট ঘাট
ঢাকার আশে পাশে দর্শনীয় স্থান এর মদ্ধে অল্প সময়ের মধ্যে মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট থেকে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকার অদূরে দোহার উপজেলায় অবস্থিত এই জায়গা আপনাকে সাগরের কথা মনে করিয়ে দেবে। মৈনট ঘাট কে মিনি কক্সবাজার নামে ডাকা হয়ে থাকে। মৈনট ঘাট সূর্যাস্তের সুন্দর দৃশ্য আপনার ভাল লাগবে। 

ঘাটের সাথে বিশাল চর সমুদ্রের বেলাভূমির স্বাদ নিতে পারেন। ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় এই জায়গাটা ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এছাড়াও পদ্মার ইলিশ কিংবা নৌকায় ঘুরার ইচ্ছা থাকলে ঘুরতে পারবেন। দোহারের মৈনট ঘাট কাটিয়ে যেতে পারেন একটি সুন্দর বিকাল। 

যাতায়ত ব্যবস্থাঃ গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে বাসে করে দোহারের মৈনট ঘাট কাটিয়ে যেতে পারেন একটি সুন্দর বিকাল। বাস ভাড়া ৯০ থেকে ১০০ টাকা। কোন বন্ধ নাই।

৫. বঙ্গবন্ধু সেতু রিসোর্ট

যমুনা রিসোর্ট, টাঙ্গাইল - ভ্রমণ গাইড
ঢাকার আশেপাশে দর্শনীয় স্থান বঙ্গবন্ধু সেতু রিসোর্ট এর আগে নাম ছিল যমুনা রিসোর্ট। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার মাঝে যমুনা সেতুর কাছেই অবস্থিত। পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা ছাড়াও ভিতরে রয়েছে সুইমিং পুল, খেলাধুলার ব্যবস্থা, জিম ও অন্যান্য সুবিধা । 

এছাড়া, বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানেওরিসোর্টটি বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজের সুবিধা দিয়ে থাকে। পিকনিক, গেটটুগেদার, ডিজে পার্টি থেকে শুরু করে নানা ধরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ঢাকার গাবতলি অথবা মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে যে কোন বাসে যাওয়া যায়। 01715-852997

খরচ: খরচ পড়বে জনপ্রতি ৪০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা। এখানে নানা ধরনের প্যাকেজ আছে ।  

৬. পদ্মা রিসোর্ট, মুন্সিগঞ্জ

পদ্মা রিসোর্ট, মুন্সীগঞ্জ » আদার ব্যাপারী
ঢাকার আশেপাশে দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে পদ্মা রিসোর্ট  হতে পারে আপনার ভ্রমণের একটি সুন্দর জায়গা। ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই পদ্মা রিসোর্ট টির অবস্থান। মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর পাশে নয়নাভিরাম লোকেশনে গড়ে তোলা হয়েছে পদ্মা রিসোর্ট। 

যারা শহরের কোলাহাল ও যান্ত্রিক জীবনের গণ্ডী থেকে মাঝে মাঝে রিলাক্স পেতে চান তাদের জন্য ঢাকার পাশে এই রিসোর্ট টি হতে পারে একটি আদর্শ নিরিবিলি এবং সিকিউরড জায়গা । শহরের কোলাহল ছেড়ে ঢাকার পাশে পদ্মার পাড়ে একটি দিন কাটানো আপনার মনকে প্রশান্তি এনে দেবে। 

পদ্মার বুকে নৌকায় ঘুরোঘুরি ছাড়াও চাইলে ফিশিং করে কাটিয়ে দিতে পারেন একটি বিকাল। মোট ১৬ টি কটেজ আছে। ১২ টি কটেজ রয়েছে যেগুলো বাংলা ১২ মাসের নামের সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে
 
যাতায়াত
গুলিস্থান থেকে বাসে চড়ে মাওয়া ফেরী ঘাট থেকে লৌহজং চৌরাস্তা মোড় দিয়ে রিক্সা বা অটোরিক্সা নিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবেন পদ্মা রিসোর্টে যাবার জন্য লৌহজং থানার সামনে মসজিদের ঘাটে। এই ঘাট থেকে ট্রলারে করে যেতে হবে পদ্মা রিসোর্টে। ট্রলার বা স্পীড বোট ভাড়া ৫০ টাকা কম বেশী হতে পারে ।

আগে থেকে বুকিং করে নিশ্চিত হতে পারলে ভাল। খালি থাকা সাপেক্ষে আপনি স্পটে গিয়ে চাইলে ভাড়া নিতে পারেন। 01712170330 

খরচঃসকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত কটেজ ভাড়া নিতে ২৩০০ টাকা লাগবে আর সকাল ১০ টা থেকে পরদিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হবে ৩৪৫০ টাকা। খাবার খরচ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মত আলাদা হিসেব করতে হবে। 

৭. নুহাশ পল্লী, গাজীপুর 

নুহাশ পল্লী কিভাবে যাবেন, খরচ এবং যোগাযোগ ঠিকানা » আদার ব্যাপারী
ঢাকার আশেপাশে দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে নুহাশ পল্লী কে আপনি অনায়াসে বেছে নিতে পারেন। এক সময়ের গল্পের জাদুকার কথা সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাঁত হুমায়ুন আহমেদ এর নিজের হাতের স্পর্শে গড়া এই পল্লী বাগান বাড়ি। এখানে যেতে পারেন আপনার প্রিয়জন, পরিবার সবাইকে নিয়ে। এক দিনের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী থেকে। 

হুমায়ুন আহমেদ তার কল্পনার সমস্ত কিছুই এখানে বাস্তবে রুপ দিয়ে গেছেন। এখানে আছে বৃষ্টি বিলাস, ভুত বিলাস নামের বাড়ি, ট্রি হাউজ, বিভিন্ন ভাস্কর্য্য, প্রায় ৩০০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছের বাগান। পদ্ম পুকুর, মৎস্য কন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি দেখতে পাবেন। আর নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় তার সমাধিস্থল দেখে আসতে পারেন।

ঢাকার আশে পাশে ভ্রমণের জন্য এই যায়গাটি আপনার পছন্দের তালিকায় যে কোন নাম্বারে রাখতে পারেন। ঢাকা হতে বাসে করে প্রথমে গাজীপুরের হোতাপাড়া নামক বাস স্ট্যান্ড নামতে হবে। এখানে নেমে রিকশা বা সিএনজি তে নুহাশ পল্লী অনায়াসে যাওয়া যায়। গাজীপুর জেলার চৌরাস্তা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক হোতাপাড়া বাজারের পিরুজালী নামক গ্রামে এই নুহাশ পল্লী অবস্থিত।

৮. পানাম ও মেঘনার পারঃ

পানাম নগর : হারিয়ে যাওয়া এক শহর - ভ্রমণগাইড.কম
পানাম সিটি ঢাকা শহর থেকে একদম আলাদা এবং অন্য রকম। পুরনো বাড়িগুলো দেখে দিন পার হয়ে যাবে। পৃথিবীর ১০০ টি ধ্বংস প্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। ঈসা খাঁ এর আমলে বাংলার রাজধানী পানামনগর। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।

ওখান থেকে কাছেই মেঘনা নদী। নদীর ওপারে গেলেই দেখবেন কাশফুলে ঘেরা বিস্তৃত মাঠ দেখতে পাবেন। চাইলে পানাম ঘুরা শেষে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন।

কিভাবে পানাম ও মেঘনার পার যাওয়া যায়? ঢাকার অদূরে ২৭কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে নারায়নগঞ্জ এর খুব কাছে সোনারগাঁতে অবস্থিত এই নগর। ঢাকা থেকে যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ। গুলিস্থান থেকে বাইক নিয়ে চলে আসবেন ‘মোগরাপারা’। সেখান থেকে চলে যাবেন পানামনগরীতে।

৯. আশুলিয়া:
সাভারের পরে আশুলিয়া এমন একটি সুন্দর জায়গা যেটিকে অনেকেই ঢাকার সমুদ্র সৈকত বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। সমুদ্র সৈকতের আবহাওয়া পাওয়া যাবে এই জায়গাটিতে। বিশেষ করে বর্ষাকালে দিগন্ত বিস্তৃত পানি আর পানির ঢেউ আপনাকে ভুলিয়ে দেবে মনের সকল কষ্ট। শরৎকালে আকাশের উপরে মেঘের খেলা আর নিচে ছলছলে পানি আপনার মনকে করে তুলবে আনন্দিত।

আপনি মন ভরে উপলব্ধি করতে পারবেন সৌন্দর্যের মোহনীয়তা। আপনি চাইলে এই আশুলিয়াতে নৌকা ভ্রমণও করতে পারবেন। নৌকা ভ্রমণে আপনার মন আরও অনেক বেশি সতেজ হয়ে পড়বে। দেখবেন মন কখন যে ভালো হয়ে গেছে আপনি নিজেও জানেন না।

ছুটির দিন হিসেবে যদি এক দিন বরাদ্দ থাকে তাহলে অনেকেই সময় স্বল্পতার জন্য ঢাকার আশপাশে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ