বঙ্গবন্ধুর চার মৌলিক আদর্শে স্কাউটসদের অনুপ্রাণিত হতে হবে: ড. মশিউর

অনুষ্ঠানে স্কাউটসদের সাথে অতিথিরা
অনুষ্ঠানে স্কাউটসদের সাথে অতিথিরা  © টিডিসি ফটো

বঙ্গবন্ধুর প্রণীত চারটি মৌলিক আদর্শে স্কাউটসদের অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চল আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ব্যাডেন পাওয়ালের আদর্শে স্কাউটস উজ্জীবিত। কিন্তু বাংলাদেশ স্কাউটসকে ব্যাডেল পাওয়ালের আদর্শের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত চারটি মূলনীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে হবে। সেটিই বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের আদর্শ হওয়া আবশ্যক।

হাজার বছরের পথচলায় বাঙালির নিষ্পেষণ, বঞ্চনা, নিগ্রহ, নিপীড়ন ও না পাওয়ার অতৃপ্তির যে জায়গা তৈরি হয়েছিল। বাঙালি সত্তায় স্বাধীনতার অতৃপ্তি এবং না পাওয়ার হাজার বছরের বেদনা ছিল। একটি আদর্শ জাতীয়তাবাদী ভাবনায় জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় তাড়িত ছিল বাঙালি। সেই তাড়না থেকে মহামুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন নিজস্ব বিপ্লবী ভাবনায় বলে জানান তিনি।

ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, যে ভাবনা ছিল পরিপূর্ণভাবে বাঙালির আত্মবিকাশের পাথেয়। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঠিক করেছিল সমাজ দর্শন। সংবিধানে তা গ্রথিত হয়। প্রণীত হয় জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র- এই চারটি মূলনীতিকেও ধ্বংস করা হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রের বদলে সামরিক শাসন, ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে ধর্মভিত্তিক সমাজ ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে বিলীন করে একটি পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশের মাধ্যমে লুটেরাদের অর্থনীতি প্রতিস্থাপন করা হয়। 

এর মধ্য দিয়ে মূলত ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের মৌলিক আদর্শকে হত্যা করা হয়। আর যখন ওই চার মূলনীতির ওপর হাত পড়েছে তখন জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে, পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে সামরিক শাসকের বুলেটে বাংলাদেশ বিদীর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ হেঁটেছে পাকিস্তানের পথে—যুক্ত করেন ড. মশিউর

স্কাউটসদের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মোৎসর্গকে বুকে ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, একজন মানুষ তার জীবন উৎসর্গ করছেন, গুলির সামনে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে তিনি শহিদের জীবনকে বরণ করে নিচ্ছেন। কোনো প্রাপ্তি তার মধ্যে ছিল না। এমনিভাবে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন নির্যাতন সয়ে একটি মানচিত্র এঁকেছেন। অতঃপর আমরা পবিত্র ভূখণ্ড পেয়েছি। 

সেই ভূখণ্ডে যখন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু হয়, পূজামণ্ডপে হামলা হয়, আমাদের উচ্চারণে, সংগীতে, সংস্কৃতি চর্চায় ভুল পথে ধাবিত হই—তখন শহিদের আত্মা কষ্ট পায় জানিয়ে তিনি বলেন, যে কেউ তোমাদের ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে, ভুল শেখাতে পারে। তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পক্ষে, আমাদের মৌলিক আদর্শের পক্ষে, আমাদের চার মূলনীতির পক্ষে মেরুদণ্ড সোজা করে প্রতিবাদ করে নিজের আত্মশক্তিকে বৃদ্ধি করবে। 

 উপাচার্য বলেন, তোমার নিজের স্বার্থে ভুল পথ থেকে বের হয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের স্বার্থে, পতাকার স্বার্থে। তাহলেই আমাদের দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল থাকবে চিরকাল। তার জন্য সবাই সম্মিলিতভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করলে আমাদের পথ চলা অবিরাম সুন্দরতম হবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।


সর্বশেষ সংবাদ