আঁখির চিকিৎসায় গাফিলতির দায় স্বীকার সেন্ট্রাল হাপাতালের

ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম
ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম  © সংগৃহীত

নবজাতকসহ না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশও করেছে হাসপাতালটি।

সোমবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় সেন্ট্রাল হাসপাতালেরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন হাসপাতালটির সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির চিকিৎসকদের, কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি।

নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন আসার কথা। ইতোমধ্যে ৫ দিন চলে গেছে, আর বাকি আছে ২ দিন। আসা করছি এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।  

হাসপাতালের পক্ষ থেকে কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন আসলেই আমরা একটা অ্যাকশনে যাবো।

একজন চিকিৎসকের পক্ষে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুশ জন রোগী দেখা কতটা সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে গেলে একজন চিকিৎসকের দৈনিক এত রোগী দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু সংযুক্তা সাহা দেখতেন, কী বলবো আর এটি নিয়ে

হাসপাতাল প্রশাসন কি তাহলে এ বিষয়গুলো এতদিন জানতো না? এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। ডাক্তারের কাছে এলে চিকিৎসা তো মূলত তারাই দেয়। তারপর কোনো একটা ইনসিডেন্ট ঘটলেই সেটা আমাদের কাছে আসে। বাইরে বিষয়গুলোতে আমাদের অবগত করা হয় না। এজন্যই আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পারিনি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৯ জুন) প্রসব বেদনা শুরু হয় আঁখির। সেই রাতেই ডেলিভারির জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে প্রসূতি আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করালে ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ডেলিভারি করতে যান ডা. মিলি।

ডা. মিলি ওই প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করার পর বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে রবিবার (১৮ জুন) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে দুপুর ২টার পর নবজাতকের পর মা আখিঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় বুধবার (১৪ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। মামলার আসামিরা হলেন- সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা (২৮), ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা (৩৮), অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জন।

বুধবার এজাহার নামীয় দুই আসামি ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) আদালতে তুললে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।


সর্বশেষ সংবাদ