অর্থনৈতিক সংকট ‍উত্তরণে সর্বোত্তম উপায় কৃষি, ভূমিকা রাখবে আউটসোর্সিংও

অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে নিজের ভাবনা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা
অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে নিজের ভাবনা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে নতুন করে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট। খাদ্যশস্য আর জ্বালানির অন্যতম ভাণ্ডার দেশ দুটির এরূপ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সমস্যা ও দুর্ভিক্ষের হুমকিতে পড়েছে উন্নয়নশীল বাংলাদেশও। উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন—দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের তানভীর আহম্মেদ।

সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতই হবে সর্বোত্তম উপায়

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলমন্ত্র হলো কৃষি। অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে কৃষি খাতের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকালে এই কৃষি খাতই আমাদের উন্নয়নের পাথেয়। স্বাধীনতার পরে এ খাতেই সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। গত দুই বছরে করোনার প্রকোপে যখন জিডিপিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে ধস নেমেছিল, তখন কৃষি খাতই আমাদের দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রেখেছিলো।

গত দুই বছরে করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও এ দেশের কৃষকেরা করোনাকে অগ্রাহ্য করে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করেছিলেন। উৎপাদিত পণ্য দেশের মানুষের খাদ্য ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভবপর হচ্ছে। সম্প্রতি ডলার সংকটের অন্যতম এক কারণ রিজার্ভ সংকট। কৃষিখাত যদি যথাযথভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তাহলে যেমন কমবে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা তেমনি বাড়বে ডলারের মান। তাই, দেশকে এগিয়ে নিতে কৃষি খাতই হবে সর্বোত্তম উপায়।

মাসুমা মমতাজ মীম
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় 

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি উন্নয়নের বিকল্প নেই

সমসাময়িক সময় ধরে বিশ্ব এক কঠিন সময় পাড়ি দিচ্ছে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বকে যেন থমকে দিয়েছে, যে ইউক্রেনকে খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রাণ বলা হতো তারা আজ জড়িয়েছে এক মরণঘাতী যুদ্ধের নেশায়। যার ফলস্বরূপ সারা বিশ্ব আজ যেন দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর দেশগুলো পড়েছে বড় হুমকিতে। এই হুমকিতে থাকা অন্যতম একটি নাম বাংলাদেশ।

সম্প্রতি, দেশটির রিজার্ভে যা ছিল তার দামও বেড়ে যাচ্ছে দিগুণ। যার করুন অবস্থা পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। এদিকে খাদ্যশস্য সঠিক পরিমাণে উৎপাদন ব্যর্থ থাকায় পূর্বাভাস মিলছে দুর্ভিক্ষের। তাই, বর্তমানে এই সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি ও প্রানীসম্পদের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, আমাদের উচিত কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদের উপর গুরুত্ব দেওয়া, তা না হলে আমাদের সামনে টিকে থাকতে কষ্ট হয়ে যাবে।

ফাহিম আল হাসান
শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয় 

আরও পড়ুন: মানুষের কাজে সহায়তা করবে কুবির তৈরি রোবট নিকো

প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন

বর্তমানে চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোটেই স্বস্তিদায়ক বা সুখকর নয়। রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপন্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়া, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি সবকিছুই গভীরভাবে ভাবাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ সংকট থেকে উত্তরণ যদিও খুব দ্রুত সম্ভব নয় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পলিসির মাধ্যমে তা উত্তরণ সম্ভব। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত আমদানির উপর নির্ভরশীল না হওয়া। খাদ্য সংকট মোকাবিলায় নিজস্ব উৎপাদিত খাদ্যের উপর নজর দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে কৃষি খাতে বাজেট বাড়ানো।

রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্দেশ্য রেমিট্যান্সে প্রেরিত অর্থ সঠিক বৈশ্বিক দরের সাথে সঙ্গত রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা যেতে পারে। অর্থ পাচার অর্থনৈতিক সংকটের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। অর্থ পাচার রোধ করার লক্ষ্যে আত্মসাৎকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ যথাযথ অনুসন্ধান করা। জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক ২ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হলেও তা খুব ফলপ্রসূ নয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমেই এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।

জান্নাতুল মাওয়া ফারিহা
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সংকট সমাধানে আউটসোর্সিংটাও গুরুত্বপূর্ণ

অর্থনীতি একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি। ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে প্রায় দুবছর করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধার কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতেই অশনিসংকেত পরিলক্ষিত হয়েছে। সরকারি তথ্যমতে দেশে ২৭ লাখ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করতে পারে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ‘ডিজিটাল ইকোনমাই রিপোর্ট-২০১৯’ মতে, বৈশ্বিক এ খাতে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন, যাদের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশে ১০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক ডিজিটালাইজেশনে এবং শিক্ষার্থীদের এই সংকট মোকাবিলায় আউটসোর্সিয়ে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। বর্তমানে দেশের ডলার সংকট চরমে। দেশের উচ্চশিক্ষিত মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

মো. জাকির হোসেন
শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ