স্নাতকোত্তর পাস করেও চাকরি পায় না কেন

ড. সুলতান মাহমুদ রানা
ড. সুলতান মাহমুদ রানা  © টিডিসি ফটো

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করা একজন শিক্ষার্থী যখন জব করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা এবং সারাজীবনের অর্জিত সব সার্টিফিকেট ও আবশ্যকীয় কাগজ পত্রাদি নিয়ে জব সার্কুলার পড়তে শুরু করে। তখন ওই শিক্ষার্থী দেখতে পায় যে বিজ্ঞপ্তির প্রায় ৯৯% জবের জন্য তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা তার অতীত জীবনের ২৪ বা ২৫ বছরে অর্জন করেছে।

কিন্তু কোনো এক শর্তের জন্য সে ৯৯% জব সেক্টরের মধ্যে ২% জায়গায়ও জবের জন্য আবেদন করতে পারে না। কথা টা অদ্ভুত হলেও ১০০% সত্য। আর সেই জায়গায়টা হলো ‘বাস্তব অভিজ্ঞতা’। জব প্রদানকারী সব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাই বিজ্ঞপ্তিতে বলে রেখেছে যে ২,৫,৮ বা ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীরাই শুধু আবেদন করবেন।

আরে জব প্রদানকারী অযোগ্য, অনভিজ্ঞ ও মূর্খ কর্তৃপক্ষ, আপনারা কী একবারও ভেবে দেখেছেন ২৪ বা ২৫ বছর বৃদ্ধ মা বাবার হোটেলে থেকে সদ্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থীগুলো ২,৫ বা ১০ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা কোথায় পাবে।

পাস করা শিক্ষার্থীদেরকে আপনারা কাজ কারবার সুযোগ না দিয়েই যদি তাদের অভিজ্ঞতা খোঁজেন তাহলে তারা অভিজ্ঞতা কোথা থেকে অর্জন করবে? এটা কী শিক্ষার্থীরা মাটিতে কুড়িয়ে পাবে নাকি আকাশ থেকে উড়ে এসে তাদের কাগজ পত্রাদির ফাইলে প্রবেশ করবে!

আরও পড়ুন: দুই প্রেমিকাকে একসঙ্গে বিয়ে করলেন রনি

আপনাদের তো লজ্জা থাকা উচিত ছিলো। আপনাদের নিজেরই তো কোনো অভিজ্ঞতা নাই। তাহলে নবীনদের নিয়োগ দেবার সময় তাদের কাজের অভিজ্ঞতা খোঁজেন কেন? এটাতো একটা কমন সেন্সের ব্যাপার যে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থী পূর্ব অভিজ্ঞতা কোথায় পাবে।

টানা ১৭ বা ১৮ বছর লেখা পড়া করার পরও যদি আপনাদের প্রতিষ্ঠানে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের কাজ করার যোগ্যতা নাই বলে যদি আপনাদের মনে হয় তাহলে আপনারা দেশের সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিচ্ছেন না কেন! সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যে যে অভিজ্ঞতা লাগবে সেগুলোর শিক্ষা দিচ্ছেন না কেন! অথবা দেশে প্রচলিত ধ্বংসাত্মক শিক্ষা ব্যবসার পাশাপাশি আপনাদের ভাষায় ‘জব পাবার অভিজ্ঞতার শিক্ষা’ দিচ্ছেন না কেন?

আপনারাই তো দেশে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে রেখেছেন যেখানে বিদ্যাকে তোতা পাখির মতো মুখস্থ করানো হয়। তাহলে আপনি আপনার কোন অভিজ্ঞতায় ৫/৮ বছরের অভিজ্ঞ প্রার্থীকে খোঁজেন। লজ্জা করে না আপনাদের এরকম অযোগ্য চিন্তা ভাবনা ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে!

আপনারা তো আপনাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে লেখা পড়া করাচ্ছেন অথবা যারা দেশে আমাদের সাথে পড়ছে তাদেরকে তো ঠিকই যোগ্যতা ছাড়াই আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রে ঠিকই বলতেছেন যে কাজে জয়েন হও। অল্প দিনের মধ্যে ঠিক অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রে ঠিকই বুঝতে পারেন আর জনসাধারণের ক্ষেত্রে আপনারা ঐ বুঝগুলো কোথায় হারিয়ে ফেলেন? পারবেন জনসাধারণের এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে?

লেখক- সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ