দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার উন্মাদনা

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’ বক্স অফিসে রেকর্ড গড়েছে
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’ বক্স অফিসে রেকর্ড গড়েছে  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের কাছে ভারতীয় সিনেমা বলতেই আলোচনার বিষয়ে থাকতো বলিউড।বিগত বছরগুলোতে এই ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন বলিউডের জায়গা দখল করে নিয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাগুলো।

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’ বক্স অফিসে রেকর্ড গড়েছে। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন কন্নড় চলচ্চিত্র তারকা নবীন কুমার গৌড়া ওরফে যশ। ২০১৮ সালে সিনেমাটির প্রথম পর্ব ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ওয়ান’ মুক্তির পরপরই বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী দর্শকরা এর দ্বিতীয় পর্বের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছিলো।

দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে যুগান্তকারী আরও দুইটি সিনেমা হলো প্রভাস অভিনীত ‘বাহুবলী: দ্য বিগিনিং’ এবং ‘বাহুবলী: দ্য কনক্লুশন’। এছাড়া ‘পুষ্পা’, ‘আর আর আর’ এর মতো সাম্প্রতিক সময়ের দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার জন্য বাংলাদেশের দর্শকদের উন্মাদনা যেভাবে চোখে পড়েছে তেমন আগ্রহ বলিউডের সিনেমার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

প্যান ইন্ডিয়া ভাবে দক্ষিণী সিনেমাগুলোর মুক্তির ধারা শুরু হওয়ার পর থেকে রীতিমতো বলিউডের কাঁধে নিশ্বাস ফেলছে। কয়েক বছর আগেও দক্ষিণী ভারতীয় সিনেমার নাম শুনলেই মনে হতো ‘মার মার..কাট কাট’ স্ক্রিপ্টের একশন ধারার সিনেমা। এক সময় দক্ষিণের সিনেমা বলতে তামিল ইন্ডাস্ট্রিকেই মনে করতেন সবাই। কিন্তু এখন দক্ষিণের তামিল-তেলেগু-মালায়লাম-কন্নড় সব ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা দেখে এ দেশের দর্শক।

রজনীকান্ত, কমল হাসান প্রজন্মের পর ধানুশ, থালাপতি বিজয়, বিজয় সেতুপাত্তি, আল্লু আর্জুন, জুনিয়র এনটিআর, রাম চরণ, মহেশ বাবু, নাগা চৈতন্য, যশ, প্রভাস, দুলকার সালমানসহ আরও অনেক তারকার ভক্ত গোষ্ঠী গড়ে ওঠেছে বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝে। পাশাপাশি রুপের গুণে তরুণ সমাজের মনে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন সাই পল্লবী, সামান্থা আক্কিনেনি, রাশমিকা মান্দানা, পূজা হেগড়ের মতো গুণী অভিনেত্রীরা।

একশন ধাচের জগত থেকে বেরিয়ে সহজ-সাবলীল গল্পের মাধ্যমে দর্শককে কিভাবে সিনেমা হলমুখী করতে হয় তা মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রি দেখিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার হিন্দি রিমেক করছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি! দক্ষিণী সিনেমাগুলো সাধারণ গল্পের মাধ্যমে দর্শককে যেমন বাস্তব জীবনের স্বাদ দেয় তেমন রোমান্টিক, সাসপেন্স, থ্রিলার, কমেডি সব ধাচের সিনেমা তৈরিতেই মুনশিয়ানা দেখিয়ে যাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিগুলো। দক্ষিণের গুণী পরিচালকদের সাথে নায়ক-নায়িকার রসায়ন দর্শককে বাধ্য করছে তাদের ইন্ডাস্ট্রির ভক্ত হতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বেই সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রি।

সিনেমা ডাটাবেজ জরিপ ‘আইএমডিবি’-র তালিকায় দক্ষিণী সিনেমাগুলোর অবস্থান ক্রমশই উর্ধমুখী। একটা সময় বলিউডে ‘লাগান’, ‘বীর যারা’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘ম্যা হু না’, ‘কাল হো না হো’, ‘রাং দে বাসান্তি’, ‘দিল চাহতা হে’ এর মতো ব্যবসা সফল সিনেমা তৈরি হতো।

সাম্প্রতিক সময়ের নেপোটিজম বিতর্ক বলিউডের জনপ্রিয়তাকে কিছুটা হ্রাস করেছে। সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খান, অক্ষয় কুমার ও হৃতিক রোশানের মতো তারকারা বলিউডকে কিভাবে পুনরায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারেন সেটিই দেখার বিষয়।

লেখক: ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স ডিপার্টমেন্ট, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ