আশরাফুল সম্পর্কে কটুক্তি বর্জনীয়

লীনা পারভীন
লীনা পারভীন  © সংগৃহীত ছবি

আমার ছোট ভাই আশরাফুল আবারও আলোচনায়। নান্নু ও আশরাফুল দুজনের লাইভ বা পরবর্তী সাক্ষাতকার দেখলাম। দুজনেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্যাপ্টেন। দুজনের বক্তব্যের মাঝে পরিষ্কার পার্থক্য বুঝা যায়। নান্নু বলেছে পরিবার থেকে অন্যকে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হয়। একদম সত্য কথা। আশরাফুল যেহেতু একটি সভ্য পরিবার থেকে বেড়ে উঠেছে তাই সে নান্নুর অশালীন আক্রমনের পরেও যথেষ্ট সম্মান রেখে কথা বলেছে।

আরও পড়ুন: আর কোনো মেয়েকে যেন মেঘলার মত মরতে না হয়

আশরাফুলের যে অন্যায় সেটি গোটা পৃথিবীতে নতুন নয়। কেউ স্বীকার করে আবার কেউ করেনা। আশরাফুলের তখন বয়স কম ছিলো। অভিজ্ঞতাও কম ছিলো। তাকে গাইড করার কেউ ছিলো না। তারপরেও সে নিজের অন্যায়কে স্বীকার করেছে অকপটে। অন্যায়ের শাস্তিও পেয়েছে। সেই সময়ের ধাক্কা আমাদের পরিবারেও লেগেছিলো। সেসব একদিন সময়ে প্রকাশ করবো।

আকসুর জিজ্ঞাসা, বোর্ডের ভূমিকা সব কাছ থেকে দেখেছি। ভয়ংকর সময় ছিলো তখন আশরাফুল ও আমাদের পরিবারের জন্য। সিমিলার অন্যায় করে সাকিব এখনও দেশসেরা প্লেয়ার অথচ আশরাফুলের বুমিং ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়া হয়েছে সেই এক উসিলায়।

আশরাফুলের বেড়ে উঠা, তার প্রতিদিনের লড়াই সবকিছু আমার পরিবারের সামনে। ওয়াহিদ স্যারের যে দুজন ছাত্র সেই সময়ে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পেরেছিলো তার মধ্যে একজন আশরাফুল ও আমার ছোট ভাই আশিক যে ফাস্ট বোলার ছিলো। আমার ছোট ভাই অনুর্ধ ১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপের আলোচিত ফাস্ট বোলার ছিলো।

আরও পড়ুন: থার্টি ফার্স্টের আতশবাজির শব্দে কাঁপছিল শিশুটি, পরদিনই মৃত্যু

মোহামেডানের হয়ে খেলেছে অনেক দিন কিন্তু এখনকার পাওয়ারফুল একজন যিনি সেই সময়ে মোহামেডানের নেতৃত্বে ছিলেন তার অসহযোগিতা আমার ভাইকে সামনে আগাতে দেয়নি। যুবদল পর্যন্ত এগুতে পেরেছিলো। জাতীয় দলের দরজা আটকে রেখেছিলো পারিবারিক ক্ষমতাবানেরা।

যাই হোক। সেইসব সময় আমরা দেখেছি। জানি অনেক কিছু। আশরাফুলের দু:সময়ে যখন কেউ পাশে ছিলোনা তখন আমাদের পরিবার তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ফেইসবুকে তখন আশরাফুল একটি জাত শত্রুর নাম। সেই সময়ে একমাত্র আমি তার হয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম কারণ সত্যটা আমরা জানি। আশরাফুলের হতাশা ও অনুশোচনাকে দেখেছি। আশরাফুল একা ছিলোনা কিন্তু শাস্তিটা সে একাই পেয়েছিলো কারণ বাকিরা ম্যাচিউর ছিলো তাই অস্বীকার করে বেঁচে গেছে।

আরও পড়ুন: টিকার সনদ ছাড়া হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়া যাবে না

আশরাফুল আমার ছোট ভাইয়ের মত। না খেয়ে অনুশীলনে যাওয়ার সময় আমার মা তাকে খাইয়ে পাঠাতো। সেই পিচ্চি আশরাফুল আর আমার ভাই বন্যার সময়ে বাসাবো থেকে নৌকা করে পল্লিমায় যেতো প্র‍্যাক্টিসে। আমাদের তিন বোনকে আপন বোনের মত শ্রদ্ধা করে। একেকদিন আমাদের বাসায় ভাইয়ের বিছানায় শুয়ে কাটিয়ে দিত ঘন্টার পর ঘন্টা।

একজন আশরাফুল একদিনে তৈরী হয়না। এর পিছনের ত্যাগের জায়গাটা কেউ জানেনা তাই বাইরে থেকে অনেক কথাই বলা যায়। নান্নু যা বলেছে তা শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা। ক্রিকেট শুদ্ধতার খেলা। এখানে একে অপরকে শ্রদ্ধা করাটাই দায়িত্ব। আশরাফুল এখনও খেলছে তাই তার সম্পর্কে এমন কটুক্তি বর্জনীয়। আশা করি নান্নু তার বক্তব্য নিয়ে স্যরি বলবে প্রকাশ্যে। বরাবরের মতই তোমার পাশে আছি ভাই।

লেখক: কলামিস্ট ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট


সর্বশেষ সংবাদ