যুদ্ধের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক ফিলিস্তিনি তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে লেখক
ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে লেখক  © ফাইল ফটো

ফিলিস্তিনে যুদ্ধের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো সেখানকার তরুণরা বিশেষ করে গাজার তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগে। গাজায় তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও বেশি। কিছুদিন আগেও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী গাজায় ফিরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরেই আত্মহত্যা করে।

এই ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর ছয় মাসের একটি সেমিস্টারে ৬০০ মার্কিন ডলার টিউশন ফি দিতে হয়। সার্কভুক্ত দেশের জন্য এই হার অর্ধেক, ৩০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের দীর্ঘ দিনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্যও সার্কভুক্ত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত টিউশন ফি প্রযোজ্য হয়েছে। তাছাড়া ফিলিস্তিন থেকে প্রতিবছর দূতাবাসের মাধ্যমে ১৩ জন এমবিবিএস ও ৩ বিডিএস শিক্ষার্থী (মোট ১৬ জন) তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মেডিকেল কলেজে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সমবেতনে পড়াশোনা করতে পারেন। ২০১৬ সালের আগে এটি বছরে ৫ জন ছিল।

আরও পড়ুন: এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুননিরীক্ষার ফল হতে পারে কাল

টিউশন ফি সার্কভুক্ত দেশের লেভেলে নিয়ে আসার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ। কিন্তু বাস্তবতা হল গাজার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই বছরে কেবল টিউশন ফি বাবদ এই ৬০০ ডলারও খরচ করার সামর্থ্য নেই। কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় এত বেশি যে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ন্যূনতম মানসম্মতভাবে ঢাকায় থাকতে চাইলেও তাকে মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার খরচ করতে হয়। তাছাড়া ফিলিস্তিন থেকে একজন শিক্ষার্থীকে মিসর কিংবা জর্ডান হয়ে ঢাকায় এসে সেট হতেও দুই লাখ টাকার একটা ইনিশিয়াল বাজেট প্রয়োজন। তাহলে দেখা যাচ্ছে চার বছরে একবারও কেউ দেশে না ফেরে তাহলেও প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার প্রয়োজন, যার পুরোটাই তাকে তার পরিবার থেকে নিয়ে আসতে হবে।

২০০৬ সাল থেকে অবরুদ্ধ গাজায় কার্যত কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অনুদান ও পারিবারিক খামারে ছোটখাট কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যতীত গাজায় আর কোনো উৎপাদন নেই। বেশিরভাগ পরিবারই অভাবগ্রস্ত। তারমধ্যেই যুদ্ধের বিভীষিকা। বাংলাদেশের স্বাভাবিক অর্থনীতিতেও কি একটি মধ্যবিত্ত পরিবার গ্রাজুয়েশনের জন্য এর কাছাকাছি বাজেট ব্যবস্থা করতে পারে?

আরও পড়ুন: এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিতে অনড় অবস্থানে সরকার

আমি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজার এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে নিজে গিয়েছিলাম কিছু ডিসকাউন্টের জন্য। কিন্তু সেখানেও মেরিট স্কলারশিপের বাইরে কোনো ছাড় দিতে রাজি হয়নি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ প্রশাসককে অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম এবং দায়িত্বও নিয়েছিলাম ছেলেটি পড়াশোনায় ভালো করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করবে। আমাকে পরে জানাবে বলা হলেও নেতিবাচক সংবাদই পেয়েছিলাম। যার জন্য ডিসকাউন্ট চেয়েছিলাম তার ১৫ বছরের ছোটভাই এবার ঈদের দিন আইসক্রিম কিনতে দোকানে যাওয়ার সময় বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে।

আমরা ব্যক্তিগতভাবে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি অনেক সংবেদনশীল, অনেক ব্যবসায়ী কয়েকজন শিক্ষার্থীর পুরো শিক্ষাজীবনে মাসে মাসে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছেন, যুদ্ধাবস্থায় কেউ কেউ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন, এমনকি কেউ কেউ যুদ্ধে যেতে চান। এবারের ক্যাম্পেইনে চট্টগ্রামের একজন জনপ্রিয় এমপিপুত্রও ভালোভাবেই যুক্ত হয়েছেন। ইচ্ছা করলে আমাদের অনেকেই নগদ অর্থ ও ওষুধপত্রের পাশাপাশি আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করতে পারি।

কিন্তু আমরা যদি ফিলিস্তিনিদের জন্য টেকসই সহযোগিতা করতে চাই তাহলে আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনিদের জন্য শতভাগ বৃত্তির কিছু শিক্ষার্থী কোটার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা সে লক্ষ্যে কাজ করতে পারি। আমি নিশ্চিত ফিলিস্তিনিরা এ সুযোগ কাজে লাগাবে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা অবকাঠামোর অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

.

লেখক: শিক্ষক ও উদ্যোক্তা


সর্বশেষ সংবাদ