বলাৎকার কেন ‘ধর্ষণ’ হবে না?
- তামান্না আক্তার
- প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:০০ PM , আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:২৩ PM
বলাৎকার একটি স্রেফ সামাজিক ট্যাবু। যে ট্যাবুটি ভেঙে আওয়াজ তুলতে পারছে না এ সমাজ, বিচার চাইতে পারছে না প্রচলিত ধর্ষণ আইনে। আইন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মধ্যেই রয়েছে ‘বলাৎকার’ টার্মে অস্পষ্টতা। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমরা যতটা সোচ্চার ঠিক ততটাই নীরব ভূমিকায় বলাৎকার প্রশ্নে। কিন্তু কেন? বলাৎকারকে কেন ধর্ষণ বলে বিবেচিত করা হবে না?
ধর্ষণ একটা জঘন্য অপরাধ। এটি যৌনতা নয়, স্রেফ সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। তেমনি বলাৎকারও একটি সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। পার্থক্য শুধু ভিক্টিম জেন্ডারে। সাধারণত এ সমাজ ধরেই নিয়ে থাকে ধর্ষণ শুধু মেয়ে বা নারীরাই হয়।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। যৌন সহিংসতায় ছেলে-মেয়ের অনুপাত ১ঃ১ অর্থাৎ ১০ জন শিশুর যদি যৌন সহিংসতাতার শিকার হয় তার মধ্যে ৫ জন ছেলে শিশু থাকে। অথচ সেসব ঘটনার বেশিরভাগই থেকে যায় অন্তরালে। ওই যে বললাম সোশ্যাল ট্যাবু! এ ট্যাবুই একটি ভয়ঙ্কর অপরাধকে সামনে আনতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কন্যা শিশু ধর্ষণের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বত্র নিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হচ্ছে ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা। সম্প্রতি তা যেন মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে।
পড়ুন: ১১ মাসে বলাৎকারের শিকার ২২ শিশু ছাত্র
কিন্তু আমরা সেটিকে ধর্ষণ না বলে বলাৎকার হিসেবে তুলে ধরছি। অথচ ধর্ষণ ও বলাৎকার উভয় ক্ষেত্রেই জোরপূর্বক যৌন সহিংসতার বিষয় উঠে আসে। যা ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুর ক্ষেত্রেই শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ও চিন্তাধারায় এক ভয়ালো কালো ছায়া সরূপ। সুতরাং ছেলে শিশু ধর্ষণকে ‘বলাৎকার’ হিসেবে বিবেচনা করে এমন জঘন্য অপরাধকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই ।
ধর্ষণকে শুধুমাত্র নারীর বিরুদ্ধে হওয়া যৌন অপরাধ মনে করার পেছনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি বর্তমান আইনের অস্পষ্টতাও অনেকাংশে দায়ী। শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ নামে একটি আলাদা কঠোর আইন থাকলেও বর্তমানে ছেলে শিশুর ধর্ষণের বিচার অনেক ক্ষেত্রেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে না হয়ে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের অধীনেই হচ্ছে।
এই আইনটিতে ‘শিশু’র যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তাতে কোন লিঙ্গ বিশেষে নয় বরং ১৬ বছরের কম বয়সী যে কোন শিশুই এই আইনে বিচার পাওয়ার কথা। কিন্তু ছেলে শিশু ধর্ষণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই এ আইনটি স্কীপ করে ফৌজদারী আইনে মামলা নেওয়া হচ্ছে যা অপরাধকে হালকা করে দেওয়া হচ্ছে যেটি মোটেও কাম্য নয়।
যৌন হয়রানি শুধু নারীকেই করা যায় এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি৷ ধর্ষণ ও বলাৎকারের মধ্যে শব্দগত ও জেন্ডার পার্থক্য না করে এটিকে শাস্তিযোগ্য জঘন্য অপরাধ হিসেবে আমলে নেওয়া হোক এবং ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন রোধে যে প্রচলিত আইন রয়েছে সেই আইনেই ছেলে শিশু ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়া চালু রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়