কেমন আছে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো?

ইরফান রিয়াদ
ইরফান রিয়াদ  © টিডিসি ফটো

করোনা সংক্রমণের জন্য আপনি লকডাউনে পড়েছেন? আপনি যদি সরকারী কর্মচারী হয়ে থাকেন তাহলে বেতন সংকোচন বা কর্মী সংকোচনের কোন আতঙ্ক নেই। অতএব ছুটি ছুটি চল নেব ছুটি, আনন্দ ঝর্ণাধারায়। সেহরি শেষে মধ্যদুপুরে ঘুম থেকে উঠা, বিকেলে ইফতারের জন্য বাজার করে নিয়ে আসা। তারপর ইফতার শেষে আবার বিশ্রাম। আহা কত আনন্দেরই না জীবন বলুন।

কিন্তু সবার জীবন তো সমান নয়। শুধু মানুষ কেন পশুদের অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। তারা জানে না করোনা কী। তারা জানে না লকডাউন কাকে বলে, কী হয় লকডাউনে।

চিড়িয়াখানার পশুগুলো শুধু জানে বেশ কিছুদিন ধরে তাদের খাঁচার সামনে মানুষগুলো আসছে না। মাঝে মাঝে বাঘটা সিংহের খাঁচার দিকে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে সিংহের খাঁচায় কেউ এসেছে কিনা। ওদিকে ম্যাকাও গুলোরও মন খারাপ। মানুষ না দেখলে তাদের ভীষণ একা একা লাগে।


আসলে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো জানে না কী ভয়ঙ্কর সময় আসতে চলেছে সামনে। আর্থিক মঙ্গার জেড়ে আর কয়দিন পর হয়তো একজনকে ঢুকতে হবে আরেকজনের খাঁচায়। তবে তা একসঙ্গে থাকার জন্য নয়,আরেকজনের খাঁচায় ঢুকতে হবে খাবার হিসেবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানাগুলোর অবস্থা এখন এতটাই ভয়াবহ।


জার্মানির টায়ারপার্ক নিউমনষ্টার চিড়িয়াখানার পরিস্থিতি ব্যাপক ভয়াবহ। তাদের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে তাদের পক্ষে পশুদের খাদ্য জোগাড় করা আর সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি করোনা সংক্রমণের ভয়ে চিড়িয়াখানার খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গুলোও আসছে না। ফলে কিছুদিন পর হয়তো বেশ কয়েকটা প্রাণীকে মেড়ে অন্য পশুকে সেই মাংস খেতে দেয়া হবে।

চিড়িয়াখানাটিতে প্রায় ৭০০ প্রাণী আছে। গত মাস থেকে চিড়িয়াখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দর্শক আসতে পারেনি। আর্থিক ক্ষতির কারণে কোষাগারে আর একটা টাকাও নেই। প্রাণীগুলো ক্ষিদের জালায় চিৎকার করছে। সরকারের কাছে অনুদানের জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি।

এখন শেষ রাস্তা একটাই। কিছু পশুকে মেরে ফেলে অন্যের খাবার বানিয়ে ফেলা। ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ একটা প্রাথমিক লিষ্ট করেছেন কোন কোন পশুকে মেরে ফেলা হবে। তবে বলা হয়েছে কোনভাবেই বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীগুলোকে মারা হবে না। যাদের সংখ্যা বেশি তাদের মধ্যে কোপ পড়বে প্রথমে। যেমনঃ গরু, ছাগল, শেয়াল, গাধা প্রভৃতি।

কিন্তু মানুষের বিনোদনের উৎস হতে গিয়ে কেনো এক প্রাণীকে হত্যা করা হবে অন্য প্রাণীর জন্য? অনেক পশুপ্রেমী খবর জানাজানি হওয়ায় এর প্রতিবাদও করেছে। কিন্তু এখনও সরকার থেকে কোন অনুদানের নির্দেশনা আসেনি। কিছু পশু প্রেমী সংস্থা এগিয়ে এসেছে অনুদান নিয়ে।

কিন্ত  কতদিন চলবে এই অনুদানের টাকা। কেউ জানে না কতদিন চলবে এই লকডাউন। অনুদানের টাকা শেষ হলে কী হবে তাও জানে না তারা। বাংলাদেশের চিড়িয়াখানাগুলোর অবস্থা আগে থেকেই ভয়াবহ। করোনা এসে যেন সেই আগুনের মাঝে ঘি ঢেলে দিল।

২০১৬ সালে কুমিল্লা চিড়িয়াখানার সিংহ যুবরাজের কঙ্কালসার দেহ ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অভিযোগ ছিল পশুপাখির জন্য আসা বরাদ্দের টাকা লোপাটের। কর্তৃপক্ষের ব্যাপক অব্যবস্থাপনায় পশু পাখিগুলোকে দিনের পর দিন কষ্টে ভুগতে হচ্ছিল। প্রতিবাদ করারও কেউ ছিল না।

সিলেটের টিলাগড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রায়ই পশু পাখি মারা যায়। এ পর্যন্ত ২৫টি প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পেপারে এসেছে। অভিযোগ আছে, কর্তৃপক্ষের ব্যাপক অব্যবস্থাপনা আর খাদ্যের অভাবে প্রায়ই বিভিন্ন প্রাণী মারা যায়। মন্ত্রণালয় থেকে রিপোর্ট চাইলে অনেক অবাস্তব কারণ দেখিয়ে বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়।

এরকমই অবস্থা দেশের বেশিরভাগ চিড়িয়াখানাগুলোর।করোনা এসে যেনো আরো বিষফোড়া উঠিয়ে দিয়েছে প্রাণীগুলোর ওপর। অর্থসংকট আর অব্যবস্থাপনায় হুমকির মুখে প্রাণীগুলোর জীবন।

এরপর কী হবে প্রাণীগুলোর? ওরা তো কথা বলতে পারে না। ওদের অভিযোগ শোনারও কেউ নেই।সরকার কি সদয় হবে তাদের ওপর? এই লকডাউনে মানুষের জন্য এসেছে ত্রাণ। অসহায় মানুষের দায়িত্বও নিয়েছে সরকার। করোনা এখন নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, সরকারের দায়িত্ব কী শুধু মানুষের দেখভাল করা নাকি পশুদের দেখভালের দায়িত্বও সরকারের? ওরা তো আবার ভোট দেয় না।

লেখক: শিক্ষার্থী, আমি আর্মি ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, সিলেটে


সর্বশেষ সংবাদ