শতবর্ষের পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!

  © টিডিসি ফটো

অনেক উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে বৃটিশ ভারতের পূর্ব বাংলায় ১৯২১ সালের আজকের এই দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানটির। ধীরে ধীরে এই প্রতিষ্ঠানটি হয়ে ওঠে বাঙ্গালী জাতির আবেগ অনুভূতির শেষ আশ্রয়স্থল। বাঙ্গালী জাতি যেনো এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরুকরে।

যখন মাতৃভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানিরা আমাদের উপর জোর করে উর্দূ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ঠিক তখনি গর্জে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অবশেষে অনেক প্রানের বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ছিনিয়ে এনে দেয়, আমরা অর্জন করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি।

আবার যখন স্বৈরাচার আয়ুব-মোনায়েম খাঁন জোর করে ক্ষমতা দখল করে এবং বাঙ্গালীদের উপর নির্মম নির্যাতন শুরুকরে ঠিক তখনি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজপথে আগুন জ্বালিয়ে স্বৈরশাসক আয়ুব-মোনায়েম খাঁনের পথন ঘটায়।

৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মূখ্য ভূমিকা পালন করে। অবশেষে পাকিস্তানী সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় এবং বঙ্গবন্ধু সহ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে করে সকল আসামিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবদান অনস্বীকার্য। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের বুকে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যে কিনা একটি জাতিকে একই সাথে একটি ভাষা এবং একটি স্বাধীন সার্বভোম দেশ উপহার দিয়েছে।

৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনও এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই স্বৈরাচার এরশাদের পতন তরান্বিত করে।

২০০৭ সালে সেনা শাসনের সময়ও সবার আগে গর্জে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তানেরা প্রকাশ্যে রাজপথে সেনাবাহিনীকে জুতাপেটা করে। অবশেষে সেই পরোক্ষ সেনাশাসনেরও পতন হয়।।

এরকম অসংখ্য ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজও বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে অসংখ্য খ্যাতনামা বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, ডক্টর, শিল্পী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, খেলোয়াড়, অভিনেতা, আমলা, কুশলী সহ জানা অজানা গুনীজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল এক সফলতার ইতিহাস যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি ব্যর্থতার ইতিহাসের পাতাও কিন্তু কম নয়। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড আর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতো বড় বড় স্কলারস, আর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয় বড় বড় খুনি আর সন্ত্রাসীরা। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণাপত্র নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রিসার্চ করতো আর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অন্যের গবেষণা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়।।

আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহোদয়দের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হতো প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য দেশ থেকে শিক্ষক আমদানি করতে হয়।

আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য নিয়োগ হতো সম্পূর্ণ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আর এখন ভিসি নিয়োগ হয় দলীয় চাটুকারিতা ও লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে।

আগেকার উপাচার্যরা সরকারকে বাধ্য করতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করতে আর এখনকার ভিসিরা সরকারের পুতুল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারের কাছে শপে দেয়। আগের ভিসি থেকে শুরু করে শিক্ষক মন্ডলী সবাই ছিল মানবিক ও শিক্ষার্থী বান্ধব আর এখনকার ভিসি এবং শিক্ষক মন্ডলী নিজেদের স্বার্থ বান্ধব।

আগে নিজেদের জান মাল থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থটা বড় করে দেখা হতো আর এখন নিজের স্বার্থের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিকিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করা হয় না। আগে ঢাবি থেকে বের হতো মানবিক ছাত্রনেতা আর এখন বের হয় অমানবিক নির্যাতনকারী ছাত্রনেতা।

এরকম অসংখ্য ভালো মন্দ ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ৯৮ বছরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজও গৌরবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আজকের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা পুরুষ সহ যাদের অবদানে ঢাবি আজও টিকে আছে তাদের প্রতি আমার অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগযুগ ধরে টিকে থাকুক এই কামনা সবসময়, আর জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে যেনো ঢাবি আবারও গর্জে উঠে সেই প্রত্যাশায়...!


লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল।
যুগ্ম-আহবায়ক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।


সর্বশেষ সংবাদ