জুমাতুল বিদার গুরুত্ব
- ড. মো: শাহজাহান কবীর
- প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ AM , আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৬ AM

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিন বান্দার জন্য বিশেষ মাস হিসেবে রমজান মাসকে নির্ধারণ করেছেন আর বিশেষ দিন হিসেবে জুমার দিনকে নির্ধারণ করেছেন। আর ‘জুমা’ এবং ‘রমজান’ যদি একত্র হয়ে যায়, তাহলে এর মর্যাদা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
পবিত্র রমজানের শেষ জুমার দিনটি আমাদের সমাজে ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত। মোবারক মাস রমজানের শেষ জুমার দিন হিসেবে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা স্বভাবতই অনেক বেশী।
হাদিস শরীফে বর্ণিত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি নেক-আমলের সওয়াব দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত দেওয়া হয় শুধু রোজা ছাড়া। কেননা রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারও রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার। (সহীহ বোখারি)।
অপর হাদিসে বর্ণিত, জুমার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আর এদিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয়। (তিরমিজি)।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অপর এক হাদিসে বলেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তিনি আরও বলেন, মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন। (ইবনে মাজাহ)
অপর হাদিসে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এইদিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এইদিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এইদিন সেখান থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে, এবং জুমার দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। ( সহীহ মুসলিম)
একজন মানুষের জীবদ্দশায় যতবার সূর্যোদয় হবে এবং যতগুলো সকাল ভাগ্যে জুটবে তার মধ্যে সবচেয়ে মহিমাপূর্ণ দিনটি সে পাবে শুক্রবার তথা জুমার দিন।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ১১৪টি সুরার মধ্যে পৃথক ও স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করেছেন, যা নামকরণ করা হয়েছে ‘সুরাতুল জুমুআহ’ নামে।
জুমার নামাজের বিষয়ে সুরা জুম’আর ৯ ও ১০ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে দ্রুত করো এবং কেনাবেচা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’
হাদিসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে যদি তার কাছে থাকে। তারপর জুমার নামাজে যাবে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না গিয়ে নামাজ আদায় করবে, তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকবে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা হবে।’ (আবু দাউদ)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
তখন তিনি বললেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে দোয়া কবুল করবেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন (সহীহ বোখারি)।
ফিকহ শাস্ত্রবিদরা জুমার দিন দোয়া কবুলের সময়টা আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
তাই আসুন, এই দিনে আমরা যতটা বেশী সম্ভব সালাত আদায়, দান-খয়রাত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ পাঠ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশী বেশী নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।