রাজনৈতিক খেয়ানত
- তাহমিদ জামি
- প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৩ AM , আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৩ AM
৫ আগস্টের পরে দেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে অনেকগুলো নতুন সংগঠন তৈরি হয়েছে। তাদের মূল আগ্রহ দেখা যায় সাংস্কৃতিক পরিচয়বাদ বা কালচারাল পলিটিক্স। শুধুই কালচারাল পলিটিক্স। আর কিছু না। শ্রমিক অধিকার না। দ্রব্যমূল্য না। ডিজিটাল অধিকার না। কৃষকের ন্যায্যমূল্য না।
ভূতপূর্ব শাহীর আমলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অথোরিটারিয়ান-লিবারাল/অথো-লিব সাংস্কৃতিক রাজনীতির দাপট দেখা গেছে। ৫ আগস্টের পরে বড় হচ্ছে বাঙালি মুসলমান পরিচয়বাদী সাংস্কৃতিক রাজনীতি। এশিয়া এনার্জি ও ফুলবাড়ির খ্যাতিধারী মাহমুদুর রহমান যে ধরনের সাংস্কৃতিক রাজনীতি করেন, এই নতুন সংগঠনগুলোও সে ধরনের রাজনীতি করে।
এই নতুন সংগঠনগুলোর আন্দোলনে, বাঙালি মুসলমান বাদে অন্যান্য পরিচয়ের মানুষ বা ভিন্ন চিহ্নকে নিশানা করা হয়। ভিন্ন জীবনধারাও তাদের নিশানা। আজকে একটি সংগঠন পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঘেরাও করে বলেছে ‘আদিবাসী’ শব্দটিকে লেখালেখি-নাটক-সিনেমা কোত্থাও ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে শাস্তি দিতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানের পর বৈছা-জানাক নেতারা পোস্ট-আইডিওলজিকাল বা উত্তর-ভাবাদর্শিক নতুন রাজনীতির কথা বলেছিলেন। গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য সমাজে সাংস্কৃতিক বিভাজনের মোচনের কথা বলেছিলেন।
আদতে ‘পোস্ট-আইডিওলজিকাল’ রাজনীতি বলে কিছু হয় না। বরং সমাজে আগের যেসকল বিভাজন ও ক্ষত জারি ছিল, সেগুলোকে নিরাময় করার বদলে খুঁচিয়ে আরও গভীর করার তৎপরতাই জাহির হয়ে উঠছে। বামপন্থী, সেকুলার ইত্যাদি ধারণার মুণ্ডুপাত করে কোন পোস্ট-আইডিওলজিতে পৌঁছানো যায়নি।
আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি ও গ্রুপিং: শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
এই আগ্রাসী সাংস্কৃতিক পরিচয়বাদী রাজনীতি জনপরিসর থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস ও গণজবানে সব ধরনের ভিন্নতাকে নির্মূল করার রাজনৈতিক বাসনা রাখে। এটা রাজনৈতিক ঈমানদারির খেয়ানত। সমাজের নানা বর্গের মানুষ যারা জুলাইয়ে শরিক ছিল, তাদের সঙ্গে খেয়ানত।
তবে এই ডানপন্থী জোয়ারের ফলে সমাজের প্রান্তিক মানুষ যেভাবে বিপন্ন হচ্ছেন, তা দেখে ভূতপূর্ব শাহীর ভক্তকূলের পৈশাচিক আনন্দের কিছু নেই। মানুষ জেনেশুনেই সকল ঝুঁকি মাথায় নিয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। তাদের সঙ্গে উদীয়মান ডানপন্থী ফ্যাসিস্টরা যে খেয়ানত করছে, তার বিরুদ্ধেও মানুষ সংগ্রাম করবে। তবে সেই পথ বড় দীর্ঘ।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)