বিজয় দিবসে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাবনা
বিজয় দিবস বাঙালি জাতিসত্তার বীরত্ব, আত্মমর্যাদা, গৌরবোজ্জ্বল ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের জাতির জন্য একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই দিনে পাকিস্তানি শাসনের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করেছিল।
বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে এই দিনটি শুধু উদযাপনের নয়, বরং নতুন করে ভাবার, জানার ও শেখার উপলক্ষ্য। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই বিজয়। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিজয় দিবস নিয়ে ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন— শায়লা আক্তার মিম।
প্রতিটি বিজয় আলোকিত ভবিষ্যতের পথ দেখায়
বিজয় মানে কেবল শৃঙ্খল ভাঙা নয়; এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিজয় যেন একটি আলোকিত ভবিষ্যতের পথ দেখায়, যেখানে বৈষম্য, শোষণ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চিরন্তন। তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন, এই বিজয় হোক মুক্তি ও সমতার মাইলফলক। বিজয়ের এই চেতনা কেবল ইতিহাস নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতেরও দিশারি। প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের কাজ ও চিন্তায় বিজয়ের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করাই প্রকৃত বিজয়ের সার্থকতা।
মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।
আমাদের দেশপ্রেমিক হতে হবে
বিজয় দিবস আমাদের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং জাতিগত গৌরবের প্রতীক। এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতার মূল্যে অর্জিত একটি ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করতে আমাদের সৎ, নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক হতে হবে। আমাদের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিটি মানুষ তাদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে। বিজয়ের চেতনা আমাদের প্রতিদিনের প্রেরণা হোক।
মাবরুরা বুশরা, অর্থনীতি বিভাগ।
আমাদের শপথ হোক ঐক্যের
আমার কাছে বিজয় মানে, আর কখনোই পরাজিত না হওয়া। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রই আমাদের প্রকৃত বিজয়। যে বিজয় আমাদের অর্থপাচারকারী হিসেবে গড়ে তোলে, যে চেতনা আমাদের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করতে শেখায়, তা আমার বিজয় নয়। আমার কাছে বিজয় হলো গণপদযাত্রা, যেখানে দেশের সকল জনতা হাসিমুখে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়াবে আর গাইবে, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’
শিক্ষার্থীদের বিজয় নিয়ে আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার আলোকে বলতে চাই, আমরা এমন একটি সুন্দর, সুগঠিত, স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ চাই, যার স্বপ্ন দেখে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ তাজা প্রাণ তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণে এসে আমাদের শপথ হোক ঐক্যের। আমাদের ঐক্য হোক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পথে, যেখানে আমরা বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করব।
মো. মহসিন, বাংলা বিভাগ।
স্বপ্ন দেখি ন্যায়-সমতার স্বপ্নের বাংলাদেশ
১৯৭১-এর বিজয় দিবসের স্পিরিট ধারণ করে, আজকের ২৪-এর প্রজন্ম একটি এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে, যেখানে ন্যায় ও সমতার আলো সর্বত্র বিরাজ করবে। দেশের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ—সব ধরনের কাঠামোতে থাকবে স্বচ্ছতা। প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষও স্বাধীনভাবে মৌলিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে। এই বাংলাদেশ হবে এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে থাকবে দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা, প্রশাসনিক হয়রানি থেকে মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ন্যায্য মূল্য, এবং একটি অভেদ জাতি।
ঘুষের পরিবর্তে মেধার মূল্যায়ন হবে, আর সমাজ হবে বৈষম্যহীন। অর্থনীতির চালিকাশক্তি দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হবে স্বাধীন ও শিক্ষা বাণিজ্যমুক্ত। দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের সমতা ও কার্যকর প্রয়োগ। থাকবে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাধীন মত ও চলাচলের অধিকার। সর্বশেষে, এমন একটি বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি, যা হবে সবার জন্য সমান, শান্তির নীড়। সর্বত্র থাকবে শৃঙ্খলার সুর। দেশের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে জাতির ঐক্য গড়ে তুলবে একটি পূর্ণাঙ্গ, স্বপ্নের বাংলাদেশ।
উম্মে হাফছা, সমাজকর্ম বিভাগ।