স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা আর বিভাজন চাইনা: নোবিপ্রবি উপাচার্য

নোবিপ্রবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা
নোবিপ্রবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা  © টিডিসি ফটো

স্বাধীনতার এ ৫৪ বছরে আমরা দেশে আর কোন বিভাজন চাইনা বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।  

এসময় তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় এদেশের আপামর খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সমাজে সর্বোচ্চ স্তরে যাঁরা ছিলেন সবার আনন্দের বিজয়। যুগ যুগ ধরে যাঁরা আসবেন সবাই এ বিজয় উপভোগ করবেন এটাই বাস্তবতা। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি, বিপক্ষ শক্তি এই বলে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও একটা দেশকে দ্বিখন্ডিত করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে তরুণরা ২৪ এর বিপ্লব করেছে সে স্বপ্ন ছিলো একটি বৈষম্যহীন, শোষনহীন, ঘুষমুক্ত, দূর্নীতিমুক্ত সমাজ। আসুন আমরা সবাই মিলে আজকের এ বিজয় দিবসে প্রত্যয় করি আমরা একটি শোষনমুক্ত, দূর্নীতিমুক্ত, ন্যায়যুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো যেখানে ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য-মিথ্যার প্রভেদ থাকবে। যেখানে  বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবে, ন্যায়ের পথে চলতে পারবে। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধে যার যে অবদান ছিলো তাদেরকে যথাযথভাবে সম্মান দিয়েই এ দেশটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আজকের তরুণ প্রজন্মকে যদি আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ দিতে না পারি তাহলে আগামীর প্রজন্ম আমাদেরকে কখনোই ক্ষমা করবেনা। আমাদের সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব এবং কর্তব্যের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রত্যেকে যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে তবেই বিজয়ের সঠিক সুফল পাওয়া সম্ভব হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ (মুরাদ)। অন্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন  নোবিপ্রবি রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর এ. এফ. এম আরিফুর রহমান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। 

এদিন সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। র‌্যালীটি  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর নোবিপ্রবি শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, ইনস্টিটিউট, বিভাগ, হল, কর্মকর্তা, কর্মচারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিজয় দিবসের আলোচনা শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪ এর গণবিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ- উপাচার্য অধ্যাপর ড. মোহাম্মদ রেজোয়ানুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় আমাদের সবার, কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির নয়। ইদানীং একটি বয়ান তৈরি করা হচ্ছে যেখানে ৭১-এর বিজয়কে ২৪-এর বিজয়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করানো হচ্ছে যা জনগণ কখনো গ্রহন করবে না, আমরা কখনো মেনে নিব না। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অনেক ঘাটতি রয়েছে, আমরা পোশাকি দেশপ্রেম থেকে সরে এসে প্রকৃত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হব।  যার উপর যে দায়িত্ব অর্পিত আছে তার সর্বোত্তমভাবে পালন করাটা দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ।

নোবিপ্রবির নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ হানিফ বলেন- আমি প্রথমে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমাদের জাতীয় বীরদের যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে।এবং একই সাথে স্মরণ করছি ২৪ এর ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহিদদের। ৭১ এ যে কারণে আমরা স্বাধীন হয়েছি সেই চেতনাধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।এবং আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,মাননীয় রাষ্ট্রপতি সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য।


সর্বশেষ সংবাদ