জোরপূর্বক পরীক্ষা বাতিল হলে এ ব্যাচের উপর নেগেটিভ ট্যাগ লেগে যাবে: সাইয়েদ আব্দুল্লাহ 

  © সংগৃহীত

একদল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলমান এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত সব পরীক্ষা বাতিল করে মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের একটা অংশ এভাবে সচিবলায় গিয়ে পরীক্ষা বাতিলে বাধ্য করায় ভালোভাবে নিচ্ছে না এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আরেকটা অংশ। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে মতামত জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনবিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্টে এসব বিষয়ে কথা বলেন। সেখানে ৬ টা পয়েন্টে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে বলেন।   

ফেসবুক পোস্টে  তিনি লেখেন, আমি জানি এইচএসসি পরীক্ষা চলমান রাখা কিংবা বন্ধ করে অটোপাশ দিয়ে দেওয়া, উভয় তর্কেই কিছু কিছু পয়েন্ট আছে। তবে আমি যেই কথাগুলো বলছি, সেগুলো শুধু আবেগ দিয়ে বিবেচনা না করে ঠান্ডা মাথায় সুদূরপ্রসারীভাবে ভাবনার একটা স্পেস দেখাতে চাচ্ছি।

১. সচিবালয় ঘেরাও করে আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য করলো কিছু এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা, সেটা যে শুধুমাত্র বাজে নজির হয়ে থাকবে তাই নয়, এর ভুক্তভোগী এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নিজেরাও হবে, হয়ত এখন অনেকে বুঝতে পারছেনা। আর সারাজীবনের জন্য কিন্তু নেগেটিভ একটা ট্যাগ লেগে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরী হবে। 

২. এই পরীক্ষার্থীরা যদি মনে করে পরীক্ষা আর হবেনা, ব্যস, তাতেই মহাখুশি, তাতে করে কিছুটা ভুল হতে পারে। কারণ ফলাফল তৈরী করা হবে কোন মেথডে তা কিন্তু আপনারা এখনও জানেন না! সেই মেথডে পরে গিয়ে কারও কপাল পুড়বে কিনা, সেটাও কিন্তু নিশ্চিত না আপনারা। ২০২০ ব্যাচের ক্ষেত্রে রেজাল্ট দেওয়ার সিস্টেমে কিন্তু অনেকেই শেষে গিয়ে আফসোস করেছিলো। কিন্তু যতদিনে তারা বুঝতে পেরেছিলো, তখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির টাইম চলে আসে, তখন বুঝেও আর কোনকিছু করার ছিলো না।

৩. পরীক্ষা চালু রাখার জন্য কীভাবে কী বিকল্প প্ল্যান করা যায়, সেটা যৌক্তিক উপায়ে ভাবতে গেলে নানা অপশন বিবেচনায় আসতে পারতো। কিন্তু সেই অপশনগুলোর দিকে না তাকিয়ে একদম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা খুব একটা যুক্তিসঙ্গত মনে হলো না। সময় দরকার হলে আরও অনেকবেশি বাড়িয়ে দেওয়া যেতো সময়। সেপ্টেম্বরে না হয়ে অক্টোবরে পরীক্ষা হতে পারতো দরকার হলে। হয়ত অবশিষ্ট সাবজেক্ট যেগুলো আছে, যদি সবার ডিমান্ড থাকতো তাহলে সেগুলোর পূর্ণমান ১০০ থেকে কমিয়ে ৫০ করা যেতে পারতো। এভাবে নানাভাবে বিচার বিবেচনা করার সুযোগ কিন্তু ছিলো। 

৪.  পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এডমিশন টাইমটা যাতে পর্যাপ্ত পাওয়া যায় ( রেফারেন্স হিসাবে বললে গত ব্যাচ মানে ২০২৩ ব্যাচ যেই সময় পেয়েছে, তারচেয়ে যাতে কম সময় না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য শর্ত বেধে দেওয়া যেতে পারতো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেই নিশ্চয়তা পেলেই তারপর বিকল্প চিন্তা বাস্তবায়নের দাবি জানানো যেতো। ইনফ্যাক্ট গতবারের চেয়েও যাতে কিছুটা বেশি সময় পাওয়া যায়, সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে আমরাও ভয়েস রেইজ করতে পারতাম এবং সবাইমিলে বললে সেই দাবিটা হয়ত গৃহীত-ও হতে পারতো।

৫. যেসব এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে এবং মারাত্মক আহত অবস্থায় আছে, এই সংখ্যা কিন্তু মোট পরীক্ষার্থীদের অনুপাতে খুবই খুবই কম। এই শিক্ষার্থীদের লিস্ট চাওয়া যেতে পারতো প্রতি উপজেলা থেকে। এরপর যাচাইবাছাই করে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতো। ( তাদের জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং বা অন্য যে কোন মানবিক পদক্ষেপ নিলে কেউই আপত্তি করতো না)

৬. অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে, যারা হয়ত কোন না কোন কারণে অতীতের বোর্ড পরীক্ষা ( যেমন এসএসসি কিংবা জেএসসি)  খারাপ হয়েছে, হয়ত তারা পরবর্তীতে রিকাভার করে ভালো পড়াশোনা করেছে, কিন্তু সাবজেক্ট ম্যাপিং করে রেজাল্ট হলে দেখা যাবে তাদের রেজাল্ট আশানুরূপ আসবে না। আর একটা কথা ভুলে গেলে চলবেনা, এই রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পয়েন্ট এবং পরীক্ষায় বসার কোয়ালিফাইং মার্ক ডিপেন্ড করে। ২০২০ এইচএসসি ব্যাচে এই প্রবলেম কিন্তু অনেকেই ফেইস করেছে, অটোপাশ পেয়ে প্রথমদিকে খুশি ছিলো, কিন্তু সাবজেক্ট ম্যাপিং করে যেই গ্রেড এসেছে, তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ধরা খেয়ে গেছে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও। 

পরিশেষে একটা কথা বলবো— এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আপনারা রাস্তায় নেমে এসে যেই অদম্য বীরত্বের স্মারক অর্জন করেছিলেন, সেই জায়গাটা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য মানুষকে আঙ্গুল তুলবার সুযোগ করে দেওয়াটা মনে হয় না উচিৎ হচ্ছে। আহতদের জন্য বা ইনজেনারেল সবার জন্যই বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে হাঁটবার সুযোগ কিন্তু ছিলো, ওপরে বলেছি এসব। 

যারা সচিবালয় ঘেরাও করে এসব করেছে, আমি নিশ্চিত নই যে তারা দেশের সব এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের রিপ্রেজেন্ট করে কিনা। যদি দেশের কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর সবাই এই মতেই একজোট হয়ে কাজ করে, তাহলে আমার কিছু বলার নাই। কিন্তু যদি ব্যাপারটা এমন হয় যে অল্প কিছুসংখ্যক পরীক্ষার্থীরা এই কাজ ঘটিয়েছে, তাহলে বোধহয় আপনারা এখনও কালেক্টিভলি ভেবে দেখতে পারেন আপনাদের কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয়।


সর্বশেষ সংবাদ