রাজনীতির একাল-সেকাল

রিয়া মোদক
রিয়া মোদক  © টিডিসি ফটো

আজকের রাজনীতি কোন পর্যায়ে আছে তা বোঝা যাবে আগের রাজনীতির সাথে তুলনা করলে। বাংলাদেশের যে জন্ম, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে রাজনীতির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সবসময় ছাত্র রাজনীতির অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রসমাজ তাদের নিজেদের এবং দেশমাতৃকার স্বাৰ্থে অত্যাচারী শাসক ও শোষক শ্ৰেণীর বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদী ভূমিকা পালন করে ছাত্ররাজনীতি।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ছাত্র রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এ তৎকালীন ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগ, ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ছাত্র সংগঠনের পরিশ্রম, সংগ্রাম এবং ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। 

৩০ লক্ষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। সেই শহিদদের মধ্যে ও ছাত্র সংগঠন ছিল। মুক্তি পাগল মানুষের সাথে ছাত্ররা গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যা দেশবাসী চিরকাল শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করে। এমন কি সামরিক জান্তার কবলে বাংলাদেশ বন্দি হয় ৯০ এর স্বৈরাচার সরকার দীর্ঘকালীন সময় যখন রাষ্ট্রের দখলদারি করে, ৯০ এর স্বৈরাচারী আন্দোলনে ও ছাত্র সংগঠন গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। 

স্বৈরাচার কে হারিয়ে গণতন্ত্র মুক্ত করে। স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ এর ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখানো হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে খুনোখুনির রাজনীতির বিকাশ ঘটলো ক্যাম্পাস অবধি। ছাত্রদল ও ছাত্রসমাজ অভিন্ন অঘটনের নায়ক হতে লাগলো। রাজনৈতিক দলের হাতিয়ারে পরিণত হতে লাগলো ছাত্ররাজনীতি। ফলে মেধাবী ও আদর্শবাদী শিক্ষার্থীরা রাজনীতি থেকে বাদ পড়লো। বর্তমানে রাজনীতির ধরন বদলে গিয়েছে, আমরা আদর্শ হারিয়ে ফেলেছি। যোগ্য লোক যদি যোগ্য জায়গায় স্থান না পায় তাহলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। তাই যেন নতুন প্রজন্ম আর রাজনীতিতে আসতে চায় না। তারা মনে করে রাজনীতি মানেই ভয়, রাজনীতি মানেই যেন দাঙ্গা, মারপিট। 

তবে কি আমরা দেশটা কে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছি? নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা কি আদর্শ রেখে যাবো? শুধু নতুন প্রজন্ম নয়, সব ধরনের মানুষের মধ্যেই রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের অনীহা কাজ করে। সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে এক ধরনের ভয় পায়। অভিভাবকরা চায় না তাদের সন্তান রাজনীতি করুক। 

অশিক্ষিত দিয়ে যেন রাজনীতি ভরে গেছে । রাজনীতি যেমন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে, তেমনই শিক্ষিত সমাজের উচিত রাজনীতিকে নির্ধারণ করা। দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবকিছুতে রাজনৈতিক মতাদর্শ বিদ্যমান। চালের দাম থেকে শুরু করে নুনের দাম সব কিছুই যেন নির্ধারণ করে রাজনীতি। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাকরি পাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করে বসে থাকে সেখানে অশিক্ষিত লোক নেতাদের টাকা দিয়ে চাকরি নিচ্ছে। কোথায় পাবে বঙ্গবন্ধুর মতো আদর্শ? নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে যে আসবে কি দেখে আসবে? রাজনীতি মানেই যদি দুর্নীতি হয় তবে কি দেখে নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে আসবে? 

রাজনীতি হতে হবে উন্নতির জন্য। যেখানে দেশ ও জাতির উন্নতি হবে। দেশের বৃহত্তর কল্যাণ চিন্তার জন্য প্রয়োজন সব শ্রেণীর পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তি। রাজনীতিতে আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে।

আজকের ছাত্র দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। যে ছাত্র সে একদিন দেশ পরিচালনা করবে। রাজনীতি ছাড়া দেশ পরিচালনা করা সম্ভব না। নেতৃত্বের গুণাবলি ছাত্রাবস্থায় অর্জন করা সম্ভব। রাজনীতি হতে হবে সুষ্ঠু ও ইতিবাচক। সকল প্রকার সন্ত্রাস ও কলুষিত চিন্তা বাদ দিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলায় সুষ্ঠু ও সুন্দর ছাত্র রাজনীতি গড়ে তুলতে হবে। তাই রাজনীতি যেন নয়, অপরাজনীতি বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

 

সর্বশেষ সংবাদ