আমরা উত্তপ্ত তাওয়ার উপর বসে আছি: ফারুকী

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী  © ফাইল ফটো

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ‍উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে মানুষের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ততেই বাড়ছে। দেশের সাধারণ মানুষের মতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে নির্বাচন নিয়ে নিজের উৎকণ্ঠার কথা প্রকাশ করেছেন তিনি। নিচে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো--

আমরা মোটামুটি উত্তপ্ত তাওয়ার উপর বসে আছি। অনেকেই যেতে আসতে তাওয়ার নীচের আগুনে তুশ ছুঁড়ে দিচ্ছে, কেউবা দিচ্ছে ঘি। সামনের ডিসেম্বর আসতে আসতে এই তাওয়ার অবস্থা কি হয়- এই নিয়া বড় আতংকে আছি। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষই এইরকম একটা উৎকন্ঠার মধ্যে আছেন। 

এই উৎকন্ঠা একমাত্র দুর করতে পারতো আমাদের দুরদর্শিতা, আমাদের দিলের রহম, আর সহাবস্থানে ইচ্ছুক মন। 

আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সকল কমিটিই নির্মূল কমিটি। আমাদের সকল আদর্শই অপর আদর্শকে বিনাশ করার মধ্যেই নিজের গৌরব খুঁজে পায়! এখানে যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা ক্ষমতার বাইরের দলকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়! এবং এটা পালাক্রমে চলতেই থাকে। এই নিশ্চিহ্ন করার বাসনা ব্যক্তিজীবনেরও এতো গভীরে চলে যায় যে, শাহরিয়ার কবিরকে না চেনার অপরাধে বাচ্চা মেয়ে সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠাইয়া দিতে মন চায় আমাদের। যেনো কিম জং উনকে না চেনার অপরাধে বসা এক কোর্ট মার্শাল। আমাকেও এরকম বহু মব ট্রায়ালে পাকিস্তানে পাঠাইয়া দেয়া হইছে। কোনো কোনো ট্রায়ালে ভারতে পাঠাইয়া দেয়া হইছে। 

২০১৪ বা ১৫ সালের দিকে একটা লেখায় লিখছিলাম, এই দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একটা বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের পক্ষে বিএনপি সমর্থক কোটি কোটি মানুষকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া সম্ভব না। বিএনপির পক্ষেও তা সম্ভব না। এমনকি জামায়াতে ইসলামী প্রায় দশ বছর প্রবল চাপের মুখে থেকেও সেদিন সমাবেশে দেখিয়েছে, আপনি চাইলেই কোনো একটা আদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের মুছে দিতে পারেন না। বরং এই চেষ্টায় আখেরে যেটা হয় সেটা হলো আমাদের কালেকটিভ শক্তির ক্ষয়! জাতির প্রাণ শক্তি ক্ষয় হয়। 

আমরা তো অনেক কিছুই ছেড়ে আসছি। উন্মুক্ত স্থানে টয়লেট করা বাদ দিছি। এনালগ ফোনের জায়গায় মোবাইল টেপা শিখছি। এক সাথে থাকাটা কেনো শিখতে পারবো না? কেনো এটা বুঝতে চাইবো না সবাই আমার মতো একই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হবে না, সবাই একই রকম খাবার খাবে না, একইভাবে ভালোবাসবে না? কেনো এটা বুঝতে চাইবো না, যার যার স্টেক নিয়ে সমাজের সব পক্ষই পাশাপাশি থাকবে? তর্ক হবে, বিতর্ক হবে, কিন্তু নির্মূলের ব্যর্থ চেষ্টা হবে না।

সময় এসেছে সকল নির্মূল কমিটির দোকান বন্ধ করে দেয়ার।


সর্বশেষ সংবাদ