‘হারিয়ে গেছে মায়ের আঁচলে মুখ মোছার সেসব দিন’
- অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ
- প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ০৪:০৩ PM , আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ০৪:০৩ PM
মা হলেন প্রাণবন্তী এবং দৃঢ় স্বপ্নবান নারী, যিনি তাঁর সন্তানদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যান। নিজের কষ্টকে আড়াল করে সন্তানের ভালোর জন্য কষ্ট স্বীকার করেন। কোন বিশেষণ কিংবা নির্ধারিত কিছু শব্দসম্ভারে হয়ত মায়ের অবদান কখনোই বলে শেষ করা সম্ভব নয়। মা হলেন সন্তানদের প্রথম শিক্ষক, বুদ্ধি ও প্রেরণা দানকারী।
মা হলো একজন বাচ্চার প্রথম শিক্ষক এবং এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর সন্তানের পাশে থাকেন। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠা, প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা বলা, শৈশব কৈশোর এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক সময়েও প্রতিটি সন্তানের কাজেই তাঁর মা পাশে থেকে সহায়তা করেন। একজন মা তার সন্তানকে না শুধু বড় করে তুলেননা বরং একজন সম্পূর্ণ মানবিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও গড়ে তোলেন।
মা সন্তানকে নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে, সামাজিকতা ও শিক্ষা গ্রহণে আত্মবিশ্বাসী হতে সহায়তা করেন। আজ বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে সকল মায়েদের গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান। আসলে আমার কাছে সারা জীবন অর্থাৎ প্রতিটি দিনই মা দিবস। নির্দিষ্ট একটি দিনে হয়তো আমরা মায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে দিবস হিসেবে পালন করি তবে মাকে ভালোবাসাতে কোন দিবসের প্রয়োজন নেই। সারাটি জীবনই মা দিবসের মতো আবেগ অনুভূতি আর ভালোবাসা ধরে রাখা বাঞ্ছনীয়। কেননা সন্তানের কাছে তার মা হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে আপন এবং আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল।
অবশ্য মায়ের আঁচলে মুখ মুছার যে আবেদন সেটি এখন শহুরে জীবনে কিংবা গ্রামীণ জীবনে অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আধিপত্য থাকায় মায়েদের সাথে সন্তানের সম্পর্ক অনেকটাই হালকা হয়ে গিয়েছে। যেটা আগে ছিল না।নাগরিক জীবনে এবং গ্রামীণ জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে আজকাল মোবাইল নিয়ে বেশিরভাগ ব্যস্ত থাকি।
তাছাড়া মা-সন্তানের সম্পর্ক হচ্ছে পৃথিবীতে এমন একটি সম্পর্ক যেটি অবিচ্ছিন্ন। শুধু মানুষ নয় বরং আমরা যদি প্রকৃতির দিকে তাকাই সেখানেও দেখব প্রাণীকুলের মধ্যেও মায়েরা কতটা দায়িত্বশীল। সন্তানকে সকলেই ফেলে যায় কিন্তু মা কখনো ফেলে যেতে পারেননা।
মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে অধ্যক্ষ বলেন, আমার মা একজন গ্রামের মানুষ। আমিও গ্রামে জন্মেছি এবং সেখানেই বড় হয়েছি। আমার বেড়ে ওঠার পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি যখন পড়াশোনা করতাম অনেক সময় আমার পরীক্ষার ফি থেকে শুরু করে পড়াশোনার যাবতীয় প্রয়োজনীয় বইপত্রসহ অন্যান্য উপকরণ সব মা জোগাড় করে দিতেন। বিশেষ করে রাত্রি জেগে যখন পড়তাম তখন মা তার ঘুম ত্যাগ করে আসার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো রাত যতই হোক না কেন সবসময়ই আমাকে গরম খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তবে তাই বলে কি বাবাদের অবদানও অস্বীকার করার মতো নয়। বাবারাও উপার্জন করে আমাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ সেবিষয়েও অবশ্যই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে। তবে সঙ্গত কারণেই বাবার চেয়ে সন্তান মায়ের কাছেই বেশি সময় থাকার সুযোগ পায়। সুতরাং কোন একজন মানুষের সাফল্যের পেছনের সবচেয়ে প্রেরণার ও বড় আশীর্বাদ হলেন তাঁর মা।
মাকে ঘিরে একটি স্মরণীয় ঘটনা যা এখনও কষ্ট দেয়; আমি একবার হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার বাবা ঢাকায় চাকরি করতেন। ঢাকা থেকে গিয়ে যখন আমাকে মাকে জিজ্ঞেস করছিলেন আমি কোথায় আছি। মা ভয়ে একেবারে ঘরছাড়া ছিলেন চার দিন। আমি যখন ফিরে এলাম তখন এ ঘটনা শুনেছি। এটি আমাকে এখনও খুব কষ্ট দেয়।
মায়ের হাতের পিঠা পায়েসের তো তুলনাই ছিল না। বিভিন্ন পার্বণে মা যেসব খাবার তৈরি করতেন সেটি হয়তো নাগরিক জীবনে ঘটেও তবে গ্রামীণ জীবনে যেসব আয়োজনে যে প্রাণ ছিল সেটি হয়তো এখন আর নেই। দেখা যেত, সামান্য একটি পাটিসাপটা পিঠাও আমাদের অনেক মধুর লাগতো। শীতকালে ভাপা পিঠা তৈরি বা আয়োজন অন্যরকম অনুভূতি তৈরি করত। ছোট সময়ে মায়ের হাতে যেসব পিঠা খেয়েছি এখন অনেক মিস করি।
লেখক: অধ্যক্ষ, ঢাকা কলেজ
অনুলিখন: রাকিবুল হাসান তামিম