আমাদের বাচ্চারাও কারো না কারো শিক্ষার্থী...

শিক্ষক শিরিন সুলতানা
শিক্ষক শিরিন সুলতানা  © টিডিসি ফটো

আজ সাত কলেজের অনার্স থার্ড ইয়ার পরীক্ষার ডিউটি করতে গিয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আমরা শিক্ষকরা অনেক সময় পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের শাসন করে থাকি কিংবা ছোট-খাট শাস্তি দিয়ে থাকি, আবার ভয়ও দেখাই। নকল করলে, দেখাদেখি করলে কিংবা বেশি কথা বললে। এটুকু তারা মেনে নেয়। 

কিন্তু তাদের সাথে যদি কোন অন্যায় আচরণ করি তাহলে তারা রিয়েক্টও করে। আজকে আমার রুমে মানোন্নয়নের শিক্ষার্থীরা ছিল। একবার একজন ছাত্রকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আজকে তুমি যে পরীক্ষা দিয়েছো তাতে মানের উন্নয়ন কি হবে।’

উত্তরে ছাত্রটি বললো, জ্বী ম্যাডাম হবে। গত পরীক্ষায় আমি একঘণ্টা লিখতে পারছিলাম। পুরাটাইম লিখতে পারি নাই। সে জন্য রেজাল্ট ভালো হয় নাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন?

উত্তরে সে বললো, ‘আমার খুব বাথরুম লাগছিল, বাথরুমে যেতে চাইছিলাম; কিন্তু ম্যাডাম আমাকে যেতে দেননি। আমি চারবার বলছিলাম তাও দেয় নাই। এক পর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমি ঘামতে থাকি, উনি আমাকে পানি খেতে দিলেন। কিন্তু আমাকে বাথরুমে যেতে দেন নাই। পরে আমি পরীক্ষা না শেষ করে চলে যাই। ছেলেটি আরেকটি কথা বলেছে, মুখে মাস্ক পরা ছিল বলে আমি উনার চেহেরাটা দেখতে পাই নাই।’

আরও পড়ুন: মায়ের সঙ্গে অভিমান করে নজরুল কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা

ওর কথা শুনে আমার খুবই মন খারাপ হলো। শুধু একবার বাথরুমে যেতে না দেয়ার কারণে ও পরীক্ষাটা শেষ করতে পারেনি। আমরা শুধু শিক্ষক নই, আমরা অভিভাবক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীও। পরীক্ষার হলে সকল শিক্ষার্থীর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের।

অনেক সময় অনেক প্রয়োজনে কিছু ছাড় দিতে হয়। বাথরুমের কথা বললে যদিও আমরা জানি এটা সত্যিও হতে পারে, আবার মিথ্যাও হতে তারপরও আমরা অনুমতি দিয়ে থাকি। কারণ, ইংরেজিতে একটি কথা আছে, "Necessecity  knows no law." অর্থাৎ প্রয়োজন কোন আইন মানে না।

আজকে যেমন আমার কাছে দুই জন ছাত্র নামাজ পড়তে যাওয়ার অনুমতি চাইল, আমি বলেছি হুকুম নাই। তারা যায় নাই।

এই ছেলেটির জীবনে যে ঘটনা ঘটলো, সে কি কোন দিন এই শিক্ষককে ক্ষমা করতে পারবে? আমাদের বাচ্চারাও কারো না কারো শিক্ষার্থী। আমরা যেমন চাই ওদের শিক্ষকরা ওদের প্রতি মানবিক হোক তেমনি আমাদেরও উচিত দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি একটু মানবিক হওয়া।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ