যে কারণে মুজিব বর্ষের আয়োজনে নেই কওমী মাদ্রাসা!
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ১০:৪৪ AM , আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০, ১১:০৩ AM
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উৎসব আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়ে বছরজুড়ে উদযাপন করা হচ্ছে আড়ম্বরভাবে। সে অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
তবে এই উদযাপন নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই কওমী মাদ্রাসাগুলোর। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়্যাহ’রও কোনও কর্মসূচি নেই। কওমী মাদ্রাসার শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন দায়িত্বশীল আলেম এ তথ্য জানিয়েছেন।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন আলেম বলছেন, ইসলামে কোনও ব্যক্তির জন্মদিন পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে দেওবন্দি আদর্শের আলেমরা হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর জন্মদিন পালন থেকেও বিরত থাকেন। সেদিক থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের কোনও সুযোগ নেই কওমী মাদ্রাসায়।
ঢাকার একাধিক প্রভাবশালী আলেম মন্তব্য করতে ‘বিব্রতবোধ’ করেছেন। ধর্মভিত্তিক একটি দলের অন্যতম নেতা ও ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসার ওই শিক্ষক বলেন,‘এ ধরনের প্রশ্নে বিব্রতবোধ করছি।আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
ঢাকার অন্যতম শীর্ষ আরেক আলেমের প্রেস সচিব বলেন, ‘জন্মশতবার্ষিকী জন্মদিবস সংশ্লিষ্ট। কওমী আলেমরা রাসুল (সা.)-এর জন্মবার্ষিকীও পালন করেন না।’ যদিও বিভিন্ন সময়ে প্রয়াত শীর্ষ আলেমদের স্মরণে দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠান করেছে তারা।
তবে কোনও-কোনও ইসলামী বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্য আলোচনা সভা ও তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল করার সুযোগ রয়েছে।
আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়্যাহ’র সদস্য ও শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আয়োজন থাকা জরুরি। যারা বাংলাদেশ স্বীকার করেন, তারা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করবেন কীভাবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে তার জন্য দোয়া ও আলোচনা সভা করা যেতেই পারে।
তিনি জানান, আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়্যাহ এখন পর্যন্ত মুজিববর্ষ নিয়ে কোনও আলোচনা করেনি।
আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়্যাহ’র আরেক সদস্য মাওলানা রুহুল আমীন বলেন, ‘উলয়ায় এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মুজিববর্ষে কোনও আয়োজন রাখা দরকার।’
দেশের প্রবীণ এক আলেম জানান, ‘মৌলিকভাবে কওমী আলেমরা একাত্তরের আগে-পরে পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন ছিলেন। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হওয়া আলেমদের সংখ্যা খুবই কম। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা না করলেও ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাদের অনুরাগ ছিল কম।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির পর যখন বাংলায় আন্দোলন-কর্মসূচি চলছিল, তখনও যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিম লীগের হয়ে কাজ করেছেন দেশের প্রভাবশালী আলেমরা। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতার কথা বঙ্গবন্ধু নিজেও তার কারাগারের রোজনামচায় উল্লেখ করেছেন।’
শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘আলেমদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কের বিষয়ে কিছু বিষয় তো প্রকাশ্যেই আছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন জুমার নামাজের খুতবায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন মুফতি নূরুল্লাহ। ওই জুমায় তার ছেলে মুফতি কেফায়েত উল্লাহও ছিলেন।’
শনিবার রাতে মুফতি কেফায়েত উল্লাহ বলেন,‘শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুফতি নূরুল্লাহ জুমার খুতবার আগে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর কেউ তার ব্যাপারে কথা বলছে না। কিন্তু আমি এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, কোরআন-হাদিসের দলিল অনুযায়ী মানুষটি মুসলমান। তার জন্য কেউ দোয়া না করলেও আমি করবো।’
মুফতি নূরুল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনূছিয়ার প্রিন্সিপাল ও প্রধান মুফতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন।
বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের যুগ্ম মহাসচিব ও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুযূল হক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মুজিববর্ষ পালনে আমাদের কোনও নির্দেশনা নেই। নিজস্ব কোনও কর্মসূচি নেই।
মুজিববর্ষের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে আল -হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়্যাহ’র সদস্য ও বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু বলেন, ‘উলয়ার পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশনা নেই। তবে সিলেটে আমার জানামতে কিছু মাদ্রাসায় স্বাধীনতার স্থপতির জন্য দোয়া করা হচ্ছে, কোরআন খতম করা হচ্ছে। আমার কাছে কিছু মাদ্রাসায় এ ধরনের আয়োজনের খবর এসেছে।’
সূত্র: বাংলাট্রিবিউন।