বেরোবির তরুণ কথাসাহিত্যিক মুকুলের গল্পগ্রন্থ ‘শয়তান গ্রহ’

লেখক ও বইয়ের প্রচ্চদ
লেখক ও বইয়ের প্রচ্চদ   © টিডিসি ফটো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম মুকুলের নতুন গল্পগ্রন্থ ‘শয়তান গ্রহ’ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন কবি ও প্রকাশক সাকিল মাসুদ। কল্পনা নয় মুখোশের অন্তরালের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার প্রতচ্ছবি ফুটে উঠেছে এই গ্রন্থের গল্পগুলোতে। 

প্রতিদিন সভ্যতার নামে অসভ্যতার বীজ বপন হচ্ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দিনে দিনে তা পরিপুষ্ট বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে সমাজের অক্সিজেন হয়ে। এই অসভ্যতার অক্সিজের গ্রহণ করে করে বিলীন হচ্ছে মনুষত্ব। এই গ্রন্থ মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়কে নতুনভাবে চিহ্নিত করেছে।

সমাজ বয়ে বেড়াচ্ছে এক মিথ্যার অপছায়া। সমাজ হয়তো একদিন ক্লান্ত হবে এই মুখোশের ভার বহন করতে করতে। আর সেদিন হয়তো সমাজ ব্যবস্থা মুখোশ বা অসুন্দর বলে কিছু থাকবে না। 

তবে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে বিদ্রোহ অনিবার্য। মুকুলের ‘শয়তান গ্রহ’ হলো সেই বিদ্রোহের ঢাল। তার লেখায় উঠে এসেছে সমাজের অন্তরালে, ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শয়তানের পুঙ্খানুপুঙ্খ চরিত্র।

লোভ মানুষকে আনন্দ আর উৎসাহ দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অপচর্চা, পুঁজিবাদ, সাম্রজ্যবাদ, অপসংস্কৃতি আর কলুষিত সমাজ ব্যবস্থার দিকে। সবাই এই কথা জানে, দেখছে, বোঝে তবুও কিছু বলতে পারছে না। কারণ মানুষের মনুষ্যত্ববোধের দরজা বন্ধ। 

সবকিছুর অপচর্চাই এখন শুদ্ধাচারচর্চা। মানুষ এতে অভ্যস্ত। ক্ষমতার পায়ের কাছে মাথা নত করে বসে আছে মানুষ। সহ্য করে যাচ্ছে সকল অন্যায়। বরং যারা এই অপচর্চার বিরুদ্ধে কথা বলে তারা সমাজবিচ্যুত, তারাই অপচর্চাকারী হিশেবে চিহ্নিত। মানুষ ক্লান্ত হচ্ছে না। বরং স্বাক্ষী গোপালের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে এইসব! 

একটি পরিচ্ছন্ন শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মূল্যবোধের আলো সূর্যের আলোর ন্যায় ছড়িয়ে পড়বার কথা ছিলো সমাজের আনাচে কানাচে। সুন্দর ও নতুনত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো মানুষের। কিন্তু তা হচ্ছে কোথায় বরং মানুষ উল্টো পথে হাঁটছে। 

আরও পড়ুন: ফুল-ফ্রি স্কলারশিপে পড়ুন তাইওয়ানে, মাসে দেবে ৯০ হাজার পর্যন্ত

এইগ্রন্থে কল্পনার শয়তান গ্রহ একটি উল্টো পথে হাঁটা সমাজ ব্যবস্থা। যেখানে অযোগ্যদের হাতে শাসন শোষণের সকল চাবিকাঠি। অযোগ্যরাই মঞ্চের উচ্চাসনে ক্ষমতার কেন্দ্রে। ফলস্বরূপ ভুলের মাসুল দিতে হয় অসহায়দের। 

মুকুল কিছু কিছু গল্পে মুখোশধারী মানুষের ছবি এঁকেছেন। বিষাদের ডেরা গল্পটি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এখানে মানুষের অন্তরালে যে পশু বাস করে সেই পশুত্ব ফুটে উঠেছে। নরপশুরা কীভাবে ছ-সাত বছরের কন্যা শিশুকে শিকারে পরিণত করে এবং করছে তারই একটি বহিৎপ্রকাশ এই গল্প। 

তরুণ লেখক মনিরুল ইসলাম মুকুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার পূর্ব প্রকাশিত উপন্যাস মৃত্যুর পাণ্ডুলিপির বিষয়ও ছিল মানবিকতা এবং মনুষ্যত্ব জাগ্রত করার। তার কবিতাও মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করাবার জন্য।

মুকুলের কিছু কিছু লেখা বয়সের চেয়ে বড়ো। ব্যঙ্গধর্মী এই গল্প গ্রন্থ খুব সহজেই পাঠকের ভাবের বোধোদয় খুলে দেবে।


সর্বশেষ সংবাদ