‘শিক্ষার্থীদের আর আত্মহত্যা নয়’

পরাজয় মেনে না নিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার আহবান লেখকের
পরাজয় মেনে না নিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার আহবান লেখকের  © ফাইল ফটো

জীবনে শুধু একটি বাধাই নয়, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই পার করতে হয় এই ক্ষুদ্র জীবন। মানুষ সেই সৃষ্টির লগ্ন থেকে কোটি কোটি শুক্রাণুর সাথে যুদ্ধ করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছেন। যেখানে জন্মটাই হয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, সেখানে জীবন একই গতিতে কখনোই চলতে পারে না। কাজেই এই জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে নেই কখনো।

তরুণ-তরুণীর বয়সটাই থাকে যুদ্ধ করার জন্য একটি ভালো সময়। আর এই বয়সটা শিখিয়ে দেয় কিভাবে যুদ্ধ করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে। কিভাবে নানা রকম বাধা পার করে জীবনটাকে সাজিয়ে নিতে হবে তা শেখায়। এখানে কেউ কাউকে ছাড় দিবেনা বিন্দুমাত্র। প্রতিটা মুহূর্ত প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কাটাতে হবে।

নানা ধাপ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা জীবন পার করতে হয়। এখানে অনেক বড় একটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো যত বড়ই বিপদ আসুক না কেন তোমাকে টিকে থাকতে হবে। এরপর যেন আরও বড় একটি যুদ্ধ অপেক্ষা করছে।তখন শুধু একা নিজেকে নিয়ে নয়, পরিবারের বোঝা নিয়ে সংগ্রাম করতে হবে। কাজেই প্রতিটা মুহূর্ত সংগ্রাম।

পাঠক এখানে সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে আপনি কতটুকু যুদ্ধে জয়ী হতে পারবেন এবং কতবার যুদ্ধের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত! সেই বিষয়টা সম্পূর্ণ আপনার পরিবেশের উপর নির্ভর করবে। এখানে আপনার পরিবেশ সেরকম নাও হতে পারে কিন্তু আপনাকে সেই পরিবেশ তৈরী করে নিতে হবে। এখানেও আপনার ধৈর্য এবং সংগ্রাম দুটোই খুব প্রয়োজন সেই সাথে আত্মবিশ্বাস।

ধরুন, এখানে আপনি পৃথিবীতে একদমই একা। আপনাকে কেউ সহযোগিতা করছে না। কারোর কাছে আপনি সাহায্য পাচ্ছেন না। সবাই আপনাকে তিরস্কার এবং বঞ্চিত করছে। ঠিক তখনই আপনি জীবনে একটি সূত্র নিজের সাথে প্রয়োগ করবেন। 
সূত্রটি হচ্ছে এমন, যার কেউ নেই তার আছে খোদা। অর্থাৎ বুঝাতে চাচ্ছি, আপনার বিপদের মুহূর্তগুলো আপনার সাথে কেবল আপনার সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন।


এই সূত্রটা যখন নিজের মধ্যে প্রয়োগ করবেন তখন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনি অদৃশ্য শক্তি আপনাকে সাহায্য করেছে। তিনি আপনাকে বড় ধরনের সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে পারে। যখন এইসব চিন্তা আপনি করবেন, তখন নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। আপনি নিজেই নিজের প্রতি প্রবল আত্মবিশ্বাসি হয়ে উঠবেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করেন কিংবা কেন তারা আত্মহত্যা কেই বেছে নেয় একমাত্র পথ হিসেবে? এই প্রশ্নের উত্তর এর আগে আপনাকে জানতে হবে কিসের আশায় কেন তারা আত্মহত্যা করেন! আত্মহত্যাই কি এক একমাত্র শান্তি বা সমাধান আত্মহত্যা করলে কি শান্তিতে থাকা যায়!

পাঠক, এই প্রশ্নের উত্তর হয়তোবা আমরা কোনভাবেই বলতে পারবো না। তবে অবশ্যই আত্মহত্যা অনেক কষ্টের তা হয়তো বা আমরা অনুভব করতে পারি। তাছাড়া আত্মহত্যার পরবর্তী জীবন আরো অনেক কষ্টের সেটা ধর্মীয় গ্রন্থে বলা আছে।

এখন আমরা বের করতে চাই আত্মহত্যা কেন করেন? তার আগে আমরা কিছু শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরতে চাই।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের জানান, কেন তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। কেউ কেউ বলেন আত্মহত্যার একমাত্র কারণ বেকারত্ব। অর্থাৎ যখন তিনি বেকার, অর্থনৈতিকভাবে সমস্যা তখন তার কাছে খুবই খারাপ লাগে এবং নিজেকে বোঝা মনে হয়।

অপরদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, সমাজের এবং পরিবারের নানারকম 'কটু কথা' কিংবা লোকে কি বলবে এসবের জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আবার অপরদিকে সবথেকে বড় বিষয়টি হলো এবং অবাক করার মতো সেটি হচ্ছে সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণে কেউ কেউ কষ্ট পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এখানে ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার জাল সমানভাবে দায়ী ইত্যাদি।

অবাক করার বিষয় আঁচল ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনাকালে গেল এক বছরে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ। পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট—এসব আত্মহত্যার ঘটনার মূল কারণ। নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ। (তথ্য: ইন্টারনেট )

সুতরাং এখানে শুধু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা দিবে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করে। নিজের কাছে নিজেই ছোট করে নেয়। মানসিকভাবে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ব্যক্তি নিজের সাথে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় 'আমি আমার জীবন আর রাখতে চাইনা'। সে তার এরকম প্রতিজ্ঞার সাথে নিজেই যুদ্ধ করতে থাকে। আত্মহত্যার কিংবা নিজেকে শেষ করে দেওয়ার এরকম একটি চিন্তা তখনি আসে, যখন তার চারপাশটা মনে হয় তার বসবাসের অযোগ্য এবং বেঁচে থেকে কোন লাভ হবে না।

আপনি জেনে অবাক হবেন, সে পরিকল্পনাও করে নিল আত্মহত্যা করবে। তারপরও তার আত্মহত্যা করার মন-মানসিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। যদি কোন রাস্তা পাওয়া যায় এই আশায় সেও যুদ্ধ করেন। এক পর্যায় যখন যুদ্ধ করতে করতে তারপরও কোনো সমাধান আসেনা ঠিক তখন অচেতন মন আবার জেগে ওঠে আত্মহত্যা কিংবা নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য।
আর ঠিক তখনই ঘটে যায় নিজের হাতেই জীবনের শেষ সমাপ্তি।


প্রিয় পাঠক আপনাদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেই, আপনার সাথে এরকমটা করলে আপনি কি করবেন?
হয়তো আপনি বীরপুরুষের মতো যুদ্ধ করতেন নয়তো কাপুরুষের মত আত্মহত্যা করতেন!

 জীবন একটি সংগ্রাম। এই সংগ্রামে টিকে থাকাটাই হচ্ছে মূল বিষয়। জীবনের স্বাদ, গন্ধ, অনুভব সবটাই হচ্ছে ভালোলাগা এবং খারাপ লাগা দুটোই নিয়ে। কাজেই শীতলতা কে অনুভব করতে হলে, রোদকেও ছুঁয়ে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে মেঘের শীতলতার থেকেও বহু শক্তিশালী সূর্যের রশ্মি। তারপরও বাঁচতে হবে।


লেখক: সমাজকর্মী


সর্বশেষ সংবাদ