অন্যসব অর্জন ‘জিরো’

এম মামুন হোসেন
এম মামুন হোসেন  © টিডিসি ফটো

পুরনো ঢাকার বনগ্রামের ছোট্ট সায়মা কিংবা বরগুণার রিফাত। আমরা কে, কতটা নিরাপদ। এই অনিরাপত্তার কারণ কী? নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়েই বঙ্গানুবাদসহ কোরআন শরীফ পড়েছি। মহাভারত, রামায়ণ শেষ করেছি। গৌতম বুদ্ধ, অতীশ দীপঙ্কর পড়েছি, যিশুর খ্রিষ্ট ধর্মাবলী নিয়ে জেনেছি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সমরেশ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবাল, মিলন পড়া শেষ। শুধু আমি একা নই। আমরা সব বন্ধুরা।

এর বাইরে অনেকের বই শেষ করার তালিকায় ছিলেন তসলিমা নাসরিনও। স্কুল জীবনে ইন্টারনেট ছিল। কিন্তু স্মার্ট ফোনের দৌরাত্ম্য ছিল না। আবেগ ছিল, ভালবাসা ছিল, স্নেহ ছিল, মায়া-মমতা ছিল। সবকিছুতেই ছিল লিখলাম। এর কারণ হচ্ছে— চলমান হিংসতায় মনে হচ্ছে মানবীয় এসব গুণ আর নেই। এখন নবম শ্রেণিতে কেউ মহাভারত পড়ে না। রামায়ণ পড়ে না। রবীন্দ্র, শরৎচন্দ্র পড়ে না। কোরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ পড়ে না। কিন্তু না বুঝে আরবী মুখস্ত করে।

এখন তারা চমক হাসান পড়ে। আয়মান সাদিক পড়ে। সবার একটি ফেবু অ্যাকাউন্ট আছে। খেতে গেলে, শুতে গেলেও ফেবুতে শেয়ার করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরের কোনও স্বপ্ন নেই। সে স্বপ্ন দেখে না; হাওয়ায় ভাসে। সেই হাওয়া সিগারেটের, সীসার কিংবা ইয়াবার। ফেবুতে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলে ‘জিরো জিরো সেভেন’। সহিংসতা, হিংস্রতা, নগ্নতার পাঠ এখান থেকে পাঠ করে।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বারবার পরিবর্তিত হয়। আমাদের সন্তান নিয়ে কুতকুত খেলা করে। ১২ বছর শেষে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেও নিজ মাতৃভাষা বাংলা কিংবা বিদেশি ভাষা ইংরেজিতে দুটি পূর্ণ সঠিক বাক্য শেখাতে পারে না। সবাই এমবিএ পাস। এতো এমবিএ পাস লইয়া কী করবো? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ১০ হাজার টাকা বেতনেও চাকুরি জোটে না। নিজে উদ্যোক্তা হবে না, চাকুরি চাই। আর বিদেশ যাবে ভাষা শিখবে না, কাজ শিখবে না। ক্লিনার হবে।

অন্যান্য অনেক প্রসঙ্গের অবতারণ করে ফেলেছি। ছোট বিষয়ের মধ্যে থাকতে চাই। অনেকে বলেন, স্মার্ট ফোন খারাপ। বাচ্চাদের নষ্ট করছে। কেন খারাপ? ইউরোপের দেশগুলো ছয় বছর বয়সী শিশুদের স্কুলে ট্যাব হাতে দিয়ে দিচ্ছে। ওদের শিশুরা নষ্ট হচ্ছে না কেন? এসব বিষয় নিয়ে ভাবা উচিত। এসব নিয়ে পলিসি লেভেলে ভাবা উচিত। শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন মানে জিপিএ-৫ এর বদলে জিপিএ-৪ নয়। যখন ডিভিশন ছিলো তখন আমাদের মেধাবীদের তেমন কোনও সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি। এর এখন খুব বেশি লাভ হচ্ছে বলেও শুনিনি।

আমরা কী করছি, কেন করছি— এর উত্তর আমাদের জানা নেই। এর জন্য কোনও গবেষণা নেই। বয়সভিত্তিক জনগোষ্ঠীর কোন খাতে কতটুকু জোগান দেওয়া দরকার; এর কী কোন গবেষণা আমাদের আছে? আমি নিশ্চিত নেই। কোন খাতে কত লোক প্রয়োজন। কোন ধরণের শিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রয়োজন, আমরা জানি না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার উৎপাদন দরকার। না কাঠমিস্ত্রি দরকার আমরা জানি না।

বুদ্ধি-ভিত্তিক চর্চা কমে এসেছে। মানুষের মধ্যে চরম অসহিষ্ণুতা। কারো বিচার মানতে আমরা নারাজ। সবাই নিজের জোর জাহির করতে চাই। কার কতো পাওয়ার। কে কতো বেশি ক্ষমতাবান। শিক্ষার উদ্দেশ্য যতদিন পর্যন্ত নির্দিষ্ট না হবে; আমরা কামাইতে উন্নত হবো। আর অন্যসব অর্জন ‘জিরো’।

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ