আন্দোলনে আহতদের দেশে চিকিৎসা দিয়েছেন ৫ দেশের ২২ ডাক্তার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ AM , আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ AM
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৫ জন শহীদ পরিবারকে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং ৭৭৫ জন আহতদের ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া করা হয়েছে। এ ছাড়াও জুলাই আন্দোলনে আহতদের দেশে চিকিৎসা দিয়েছেন ৫ দেশের ২২ ডাক্তার।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তৃতীয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম প্রমুখ।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অব. বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জালাল উদ্দীনকে চেয়ারম্যান করে মেডিকেল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে। সভায় তিনি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছেন।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে নয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনকে থাইল্যান্ডে ও ৩ জনকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আরও দুজন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া আহত আরও ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আহতদের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে কয়েকটি স্পেশাল মেডিকেল টিম এসেছে। এর মধ্যে নেপাল থেকে ৩ জন বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাজ্য থেকে ২ জন বিশেষজ্ঞ, ফ্রান্স থেকে ১ জন বিশেষজ্ঞ, থাইল্যান্ড থেকে ৬ জন বিশেষজ্ঞ ও চীন থেকে ১০ জন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে এসে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো পরিদর্শন, অস্ত্রোপচার সম্পন্ন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোর কাছে সহযোগিতা চাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘গুরুতর আহত যারা তাদের বিস্তারিত মেডিকেল হিস্ট্ররির রিপোর্ট তৈরি করে দূতাবাসগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তারা জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছিলেন তাদের আহতদের ব্যাপারে সহানূভুতি আছে। নিশ্চয়ই তারা আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন।’
বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ, শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসী আরা জামানসহ শহীদ পরিবারের ১৪ জন সদস্য অংশ দেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্মমভাবে গুলিতে নিহত সন্তানের মরদেহ উদ্ধার থেকে দাফন পর্যন্ত দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকাররের পরামর্শ দেন এবং জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা কিছু সময়ের জন্য আমাকে আপনাদের অনুভূতি জানিয়েছেন। সন্তান ও ভাই-বোন হারানোর যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা এটি মহাকাব্য। এই অল্প সময় এটি প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। যারা শহীদ হয়েছে তারা একেকটি পরিবার থেকে এসেছে। আপনারা, আপনাদের পরিবার এমন একেকজন মানুষ তৈরি করেছে যারা এতখানি দুঃসাহস নিয়ে অধিকারের কথা বলেছে। আমি এই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই এবং একইসঙ্গে আপনাদেরও, শহীদদের পরিবারের সকলকে শ্রদ্ধা জানাই।’
‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য আহত ও নিহতদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে যেন পালন করা যায়। এটা আপনাদের ফাউন্ডেশন। আপনারা সরাসরি যুক্ত হন, পরামর্শ দেন, নিজের মতো করে গড়ে নেন,’ শহীদ পরিবারের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন।
সভায় নির্বাহী পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. সারজিস আলম, অর্থ সম্পাদক হিসেবে মোহা. আহসান হাবীব চৌধুরী এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে অ্যাডভোকেট মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি ও ডা. তাসনিম জারাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট, ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম শাহীনকে প্রধান করে একটি লিগ্যাল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি ছয় সদস্যের গভর্নিং বডি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, কাজী ওয়াকার আহমাদ, নূরজাহান বেগম, শারমীন এস মুরশিদ, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।