দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোবাসায় দেশে ফিরে আসি
ড. মো. মিজানুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের এ সহযোগী অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন অণুজীব বিজ্ঞানের এ গুণী গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত এ সিনেট সদস্য ঢাবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন জাপানের কুমামোতো ইউনিভার্সিটি থেকে। পোস্ট ডক্টরাল স্কলার হিসেবে গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছিলেন আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের ফেলো। এরপর শিক্ষকতা করেছেন জাপানের তোহোকু ইউনিভার্সিটিতে। পরে দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সার্বিক উচ্চশিক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইরফান এইচ সায়েম—
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমাদের দেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাওয়াদের সিংহভাগই দেশে ফিরছে না। প্রথমেই জানতে চাই, দেশে ফিরলেন কেন?
ড. মো. মিজানুর রহমান: আমি জাপান থেকে পিএইচডি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোস্ট ডক্টরাল সম্পন্ন করি। এরপর জাপানের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা শুরু করি। বিদেশে কর্ম পরিবেশ ও জীবনমানসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি, এটা সত্য। তবে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাই তখন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোবাসায় দেশে ফিরে আসি। নিজের দেশে শিক্ষা ও গবেষণায় গুণগত কাজ করার স্বপ্ন নিয়েই মূলত এই চলে আসা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও গবেষণাগারের গল্প শুনতে চাই….
ড. মো. মিজানুর রহমান: শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতা সবসময় আমার কাছে দারুণ। নিজের অর্জিত জ্ঞান অন্যদের সাথে বিনিময় করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে আমারও জানার-শেখার সুযোগ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দারুণ মেধাবী। তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারার মধ্যে আনন্দ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমার মৌলিক কাজ হলো গবেষণা করা। আমি সেটা চলমান রেখেছি। বিভিন্ন ল্যাবে কাজ করছি। এই বিভাগে দেশবরেণ্য গবেষক ও ছিলেন। দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ গবেষণাও করছি। এই বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনেক ভালো মানের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথম সারির আন্তর্জাতিক জার্নাল সমূহে আমাদের গবেষণা প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর অণুজীব বিজ্ঞানের গুরুত্ব বেশ বেড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সক্ষমতা ও সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বলুন…
ড. মো. মিজানুর রহমান: ইতিমধ্যে আমি বলেছি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলেই একটা বিভাগ। করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সবাই দেখেছেন, একজন অণুজীব বিজ্ঞানী দেশের জন্য কত প্রয়োজন। শুধু এখানে নয় বিভিন্ন রোগতত্ত্ব নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানে সারা বিশ্বে অণুজীব বিজ্ঞানীরা অগ্রগামী ভূমিকা রাখছেন। এখানে আমাদের বিভাগে উন্নত মানের গবেষণাগার রয়েছে। সেখানে নিয়মিত ভালো মানের গবেষণা হচ্ছে। সেসব গবেষণার তথ্য ও ফলাফল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ হচ্ছে। অনেক উদ্ভাবনী কাজও হচ্ছে। তারপরও আমাদের আরো বেশকিছু আধুনিক গবেষণাগার প্রয়োজন। আশা করছি, ক্রমান্বয়ে সেগুলো স্থাপন করা হবে। শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করা একটু চ্যালেঞ্জিং। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি, এবং ফলও পাচ্ছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা সবখানেই অনেক ভালো করছে। আমাদের যতটুকু রিসোর্স রয়েছে ততটুকু নিয়েই কাজ এগিয়ে নিতে চাই। তবে উন্নতমানের গবেষণার জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দরকার, আমাদের এখানে তা নেই। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ভালো গবেষকের অভাব নেই আমাদের, দরকার অত্যাধুনিক গবেষণা অবকাঠামো এবং অনেক বেশি গবেষণা বরাদ্দ। আর একটি বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন, তা হলো প্রকৃত ভালো গবেষকদের কাজের মূল্যায়ন করা এবং উৎসাহ বাড়ানোর জন্য পুরস্কৃত করা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষকদের জন্য কী ধরনের কাজের পরিকল্পনা রয়েছে?
ড. মো. মিজানুর রহমান: শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করায় অমি আমার সকল সহকর্মীর কাছে কৃতজ্ঞ। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি দূর করতে পারলে শিক্ষকরা শিক্ষাক্ষেত্রে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন। তাই শিক্ষকদের মঙ্গলের জন্য যেকোনো ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রের কাছে সহযোগিতা চাইবো। তাছাড়া শিক্ষকদের কর্মপরিবেশ যেন আরো উন্নত করা যায় সে বিষয়ে কাজ করবো। শিক্ষক সমিতির দায়িত্বে আছি বলে শুধু শিক্ষকদের নিয়ে ভাববো তা নয়। শিক্ষার্থীরা হলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তাই শিক্ষার্থীদের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়েও কাজ করবো। সর্বোপরি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই।