এশিয়াটিক সোসাইটিকে গবেষণার সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান করতে চাই
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি মৌলিক গবেষণা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান। মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার মানসে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা। প্রতিষ্ঠানটি অংশীজন কর্তৃক নির্বাচিত কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়। আগামী মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কাউন্সিল নির্বাচন ২০২৪ ও ২০২৫। ইতিমধ্যে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। এ নির্বাচনের অন্যতম প্যানেল হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ-অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফের নেতৃত্বে ১৭ জনের প্যানেল যা মুক্তবুদ্ধিচর্চার প্যানেল। এই প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে ২নং ব্যালটে (বর্তমানে একই পদে দায়িত্বরত) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। ড. হুমায়ুন কবির তার নিজের প্যানেল ও নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মবিন আবদুল্লাহ ও হাসিবুল হাসান শান্ত-
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্পাদক পদপ্রার্থী হলেন। পুনরায় নির্বাচনে দাঁড়াতে আপনাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে?
ড. হুমায়ুন কবির: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির মূল কাজ জ্ঞান চর্চা করা এবং জ্ঞান অন্বেষণের মাধ্যমে তা জনমানসে বিতরণ করা। শিক্ষকতার কাজটাও সমরূপ। সুতরাং শিক্ষকদের কাজের সাথে এশিয়াটিক সোসাইটির কাজের সাযুজ্য রয়েছে। আপনি জেনে থাকবেন বাংলাদেশের সর্বপ্রান্তের গবেষকদের এশিয়াটিক সোসাইটির সাথে সংযুক্তার আগ্রহ রয়েছে। আমারও গবেষণার ও গবেষণা নিবিড় কাজে সমন্বয়ের আগ্রহ থেকে দীর্ঘদিন সোসাইটির সাথে সম্পৃক্ত থাকা এবং বর্তমানে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বর্তমান কমিটি করোনার কারণে মাত্র দেড় বছর সময় পেয়েছে। সংগত কারণেই সোসাইটির উন্নয়নে নেয়া বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আর তাই পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে এশিয়াটিক সোসাইটির কাজকে অগ্রসরের উদ্দেশ্যে আমি পুনরায় সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সোসাইটির কি কি সংকট বা সমস্যা রয়ে গেছে। পুনরায় নির্বাচিত হলে কিভাবে তার সমাধান করবেন?
ড. হুমায়ুন কবির: সোসাইটির সংকট একরকম আবার সম্পাদক কর্তৃক এই সমস্যার সমাধান করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এশিয়াটিক সোসাইটি পরিচালিত হয় মূলত সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক। সাধারণ সম্পাদক সোসাইটির নীতি প্রণয়নের বিষয়টি কোরডিনেট করেন। অন্যদিকে সেক্রেটারি কাজ মূলত ট্রাস্ট ফান্ডগুলো যথার্থ রূপে পরিচালনা করা। অর্থাৎ সোসাইটির রুলস অব বিজনেসে সম্পাদকের কাজ সীমিত। এখন ট্রাস্টফান্ড পরিচালনার চ্যালেঞ্জ গুলো আমি আপনাকে বলতে পারি। সোসাইটির ৪৬টি ট্রাস্ট ফান্ডের বড় একটা অংশ ২০০০ সালের পূর্বের। এসব ট্রাস্ট ফান্ডের স্বল্প মূলধন ও মুনাফার অপর্যাপ্ততার কারণে ট্রাস্ট ফান্ডগুলো যথার্থ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ট্রাস্ট ফান্ডগুলোর আওতায় বার্ষিক লেকচারের জন্য কাঙ্ক্ষিত মানের গবেষক পাওয়া এখন খুবই কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রতি ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠার আলাদা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকায় আমাদের বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ খুঁজতে হয়। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, সোসাইটি সবসময় অভিজ্ঞ ও সুদক্ষ বক্তা চায়। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি মানসম্মত তরুণ গবেষকদের সুযোগ করে দিতে অর্থাৎ একটা প্রজন্ম তো আমাদের তৈরি করতে হবে সম্ভাবনাময় আগামী তৈরিতে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল থেকে আপনাদের প্যানেলের ভিন্নতার জায়গাটা কোথায়?
ড. হুমায়ুন কবির: আমি প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি।এশিয়াটিক সোসাইটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। নানামাত্রিক সেক্টরের সন্মিলন জরুরি। এখানে বিভিন্ন প্রকরণের গবেষকদের প্রাধান্য থাকা উচিত। দুটো প্যানেল পর্যালোচনা করলে আপনারা দেখবেন আমাদের প্যানেলে বিদেশি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী গবেষকের সংখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের চেয়ে অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, আপনি যদি দুটো প্যানেলের গবেষণার সংখ্যা দেখেন তাহলে দেখবেন স্বীকৃত মানের গবেষণা তাদের থেকে আমাদের অনেক বেশি।শুধু তাই নয়,আমাদের প্যানেলে এমন প্রার্থীও আছে, যাঁরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিসম্পন্ন এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করছেন। আমাদের প্যানেলে তিনজন উপাচার্য আছেন এবং এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হচ্ছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক। সুতরাং একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা জন্য যে পরিমাণ অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা থাকা দরকার, তা আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের রয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এবার আপনাদের প্যানেলের উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী ইশতেহারগুলো কি কি?
ড. হুমায়ুন কবির: মুক্ত বুদ্ধির আলোকে জ্ঞানচর্চা, স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত গবেষণার সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এশিয়াটিক সোসাইটিকে গড়ে তোলা-আমাদের প্রতিশ্রুতি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সোসাইটির আয়োজিত প্রোগ্রাম বিশেষ করে ট্রাস্ট ফান্ডগুলোর প্রোগ্রামে উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকে। এর কারণ কি বলে মনে করেন?
ড. হুমায়ুন কবির: এশিয়াটিক সোসাইটিতে সেক্রেটারি তত্ত্বাবধানে ৪৬টি ট্রাস্ট ফান্ড থাকায় সারা বছরই অনেক প্রোগ্রাম আয়োজন করতে হয়।সকল ট্রাস্ট ফান্ডগুলো সক্রিয় রাখার স্বার্থে আমাকে সপ্তাহে অনেক সময় একাধিক লেকচারের আয়োজন করতে হয়েছে। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রোগ্রামগুলোর লেকচার একেকদিন একেক বিষয়ে হয়। তাই যার আগ্রহ যে বিষয়ে, তিনি সে বিষয়ের প্রোগ্রামে আসেন। এ কারণে লেকচারে কখনো কখনো কম উপস্থিতি থাকে। তবে আমার সময় সকল লেকচার ‘ডুয়েল মোডে’ চালিয়েছি। আপনারা দেখে থাকবেন, অনলাইনে প্রচুর দর্শক ছিলেন। সব মিলিয়ে কোন লেকচারেই ৫০ জনের কম উপস্থিতি ছিল না। ইউরোপ আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় লেকচারেও ১০/১৫ জনের বেশি শ্রোতা থাকে না। আবার কোভিডের কারণে গত দুবছর সোসাইটির প্রোগ্রাম অনলাইনে হয়েছে। মানুষ কিন্তু অনলাইনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আবার ঢাকা শহরের যানজটও কম উপস্থিতির অন্যতম কারণ। আবার দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সদস্য আসেন না। বেশ কয়েকটি লেকচারে কিন্তু ব্যাপক উপস্থিতি হয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সোসাইটির ৭১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ট্রাস্টফান্ড প্রোগ্রাম আয়োজন করে রেকর্ড করলেন। কিভাবে এটি সম্ভব হলো?
ড. হুমায়ুন কবির: সোসাইটির সম্মানিত সদস্যদের সহযোগিতা বিশেষ করে ট্রাস্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি এবং সদস্যগণের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। সোসাইটির কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ এক্ষেত্রে আমাকে খুবই সহযোগিতা করেছে বিশেষ করে ট্রাস্ট অফিসার অর্ণব ঘোষের দারুণ সহযোগিতা পেয়েছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৬ মাসে ৪৯টি লেকচার আয়োজন সম্ভব হয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ।
ড. হুমায়ুন কবির: আপনাদেরও ধন্যবাদ।